মানুষের শরীরে হার্ট বা হৃদ্যন্ত্র হল একটি ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল পাম্প। হার্টের উপরের দু’টি চেম্বারকে বলে ‘অ্যাট্রিয়া’ বা অলিন্দ এবং নীচের দু’টিকে ‘ভেনট্রিকল’ বা নিলয়। হার্টের উপরের ডান দিকের অ্যাট্রিয়ায় সাইনোয়াট্রিয়াল নোড থেকে যে ইলেকট্রিক ডিসচার্জ হয় তার ফলে উপরের অ্যাট্রিয়া সঙ্কুচিত হয় এবং রক্ত উপরের চেম্বার থেকে নীচের ভেনট্রিকল-এ পৌঁছোয়। এই ইলেকট্রিক সিগন্যালই ভেনট্রিকলে সঞ্চারিত হলে ওই চেম্বার সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় ও ছন্দ হার্টের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হয়। সাধারণত মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার এই ইলেকট্রিকাল ডিসচার্জ হয় এবং হার্ট রেট বা হৃদ্স্পন্দন ৭২-এর আশপাশে থাকে। কিন্তু খেলাধুলো বা অন্যান্য কাজের সময়ে এটা বেড়ে যায়। হৃদ্স্পন্দনের এই সাধারণ ছন্দ যখন ব্যাহত হয় তখন হার্টের অলিন্দ এক সময় তীব্র এবং অসংলগ্ন গতিতে সঙ্কুচিত হয় আর নীচের চেম্বার বা নিলয় অন্য সময়ে সঙ্কুচিত হয়। এই পরিস্থিতিকে বলা হয় অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (AFib)। এর ফলে স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইলিওরও হতে পারে।
ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের (এমজিএইচ) গবেষকরা ‘বিজ্ঞান’ পত্রিকায় প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বলেন যে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু ইমিউন কোশ AFib –র প্রধান কারণ এবং AFib চিকিত্সা এবং প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এই কোশকেই লক্ষ্য বস্তু করা যেতে পারে।
এমজিএইচ সেন্টার ফর সিস্টেমস বায়োলজির গবেষক ম্যাথিয়াস নাহরেনডর্ফ এবং সহকর্মীরা AFib আক্রান্ত রোগী ও AFib রোগে আক্রান্ত নয় এমন কিছু ব্যক্তিদের থেকে সংগৃহীত অ্যাট্রিয়াল হার্টের কলা থেকে একক কোশ বিশ্লেষণ করেন। তারা দেখেন যে AFib আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হার্টের অলিন্দে ম্যাক্রোফেজ নামক ইমিউন কোশের আধিক্য দেখা যায় এবং রোগাক্রান্ত কলায় এই কোশ অন্য যে কোনও কোশের চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। জিন এক্সপ্রেশন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে AFib আক্রান্ত মানুষের এবং ইঁদুরের হার্টে SPP1 জিনটি ম্যাক্রোফেজে খুব বেশি মাত্রায় দেখা যায়। এই জিনটি SPP1 প্রোটিন তৈরি করে (যাকে অস্টিওপন্টিনও বলা হয়) যা হার্টের কলাতে ফাইব্রোসিস বা স্কারিং ঘটায়। এই ফাইব্রোসিস বা স্কারিং পরে হার্টে ইলেক্ট্রিক্যাল সঞ্চালনের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে এবং অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন ঘটায়। অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশনের সাথে জড়িত কার্ডিয়াক এবং ইমিউন কোশের ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে, ও পরবর্তী থেরাপির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই রোগের চিকিত্সা অগ্রসর হতে পারে।