আর্কটিক অঞ্চলের হিমশীতল পরিবেশের সাথে মোকাবিলা করার জন্য জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী, সিল অনেক অভিযোজনের মধ্যে দিয়ে গেছে যার মধ্যে অন্যতম হল নাকের যে গহ্বর রয়েছে সেই হাড়ের অভিযোজন। তুলনামূলকভাবে উষ্ণ পরিবেশে বসবাসকারী এই স্তন্যপায়ী প্রজাতির তুলনায় আর্কটিক সিলের অনুনাসিক প্যাসেজ বেশি জটিল ও প্রসস্থ। গবেষকরা সম্প্রতি বায়োফিজিক্যাল জার্নালে রিপোর্ট করেছেন যে এই কাঠামো সিলকে শ্বাস প্রস্বাস নেওয়ার সময় আরও দক্ষতার সাথে তাপ এবং আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঠাণ্ডা, শুষ্ক পরিবেশে, প্রাণীরা কেবল শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে তাপ এবং আর্দ্রতা হারায়। বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদের অনুনাসিক গহ্বরের ভিতরে ম্যাক্সিলোটার্বিনেট নামক এক ধরনের জটিল হাড় থাকে যা এই ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই ছিদ্রযুক্ত হাড় মিউকোসাল টিস্যু দ্বারা আবৃত থাকে। এই কলার মধ্যে প্রচুর রক্তনালিকা উপস্থিত যা শ্বাস নেওয়া বাতাসকে উষ্ণ এবং আর্দ্র করে, ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শ্বাস ছাড়ার সময় তাপ এবং আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস করে। প্রজাতির মধ্যে এই হাড়ের গঠনে পার্থক্য রয়েছে।
গবেষকরা আর্কটিক প্রজাতির সিল বা দাড়িওয়ালা সিল (এরিগনাথাস বারবাটাস) এবং একটি উপক্রান্তীয় প্রজাতি বা ভূমধ্যসাগরীয় মঙ্ক সিল (মোনাচুস মোনাকাস) এর অনুনাসিক গহ্বর/ম্যাক্সিলোটার্বিনেটের ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করতে কম্পিউটার টমোগ্রাফি ব্যবহার করেছিলেন। তারপরে, দুই প্রজাতির সিলের হিমশীতল পরিবেশে (-৩০°C) এবং উপক্রান্তীয় পরিবেশে (১০°C)-এ শ্বাস নেওয়ার সময় বাতাসকে উষ্ণ ও আর্দ্র করার এবং শ্বাস ছাড়ার সময় তাপ এবং আর্দ্রতা হ্রাস করার ক্ষমতার তুলনা করেন। তারা অনুনাসিক গহ্বরের গঠনগত বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। গবেষকরা দেখেন যে উভয় পরিবেশের তাপমাত্রায় তাপ এবং জল বিনিময় ধরে রাখতে উপক্রান্তীয় অঞ্চলের সিলের তুলনায় আর্কটিক সিল অনেক বেশি দক্ষ। আর্কটিক সিলের তুলনায় ভূগর্ভস্থ সিল -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, প্রতি শ্বাস-প্রশ্বাস চক্রে ১.৪৫ গুণ বেশি তাপ এবং ৩.৫ গুণ বেশি জল হারায় এবং ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, ভূগর্ভস্থ সিল ১.৫ গুণ বেশি তাপ এবং ১.৭ গুণ বেশি জল হারায়। আর গবেষকরা দেখেছেন যে আর্কটিক অঞ্চলে বসবাসকারী সিলের ঘন অনুনাসিক গহ্বরের কারণে এই সুবিধা হয়েছে।