কার্ডিওমায়োসাইটস নামক হৃৎপিণ্ডের কোশ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাকৃতিক ব্যাটারি হিসেবে কাজ করে যা এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে দিনে ১০০,০০০ বার স্পন্দিত করে মানবদেহে প্রতিদিন প্রায় ৭৬০০ লিটার রক্ত পাম্প করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন সেই ব্যাটারিগুলো নষ্ট হয়ে যায়, তখন ক্ষতি মারাত্মক হতে পারে কারণ হৃৎপিন্ডের পেশির ক্ষতি সাধারণত স্থায়ী হয়, যার ফলে হৃৎপিণ্ড আর রক্ত পাম্প করতে পারে না। ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ফ্লোরিডার (ইউএসএফ) স্বাস্থ্য চিকিত্সকরা সার্কুলেশন নামক জার্নালে তাদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন। ইউএসএফ হেলথ হার্ট ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ডিরেক্টর ডা-ঝি ওয়াং বলেছেন যে হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিওমায়োসাইটের ব্যাপক ক্ষতি করে এবং তা ঠিক করা প্রায় সম্ভব নয়, সুতরাং, দেখতে হবে হার্ট নিজেই কীভাবে নিজের কোশ মেরামত করবে।
কার্ডিওমায়োসাইট হল হৃদযন্ত্রের কলার বিল্ডিং ব্লক এবং হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য অপরিহার্য। হৃৎপিণ্ড ক্রমাগত সংকুচিত হয়, এবং এর জন্য প্রচুর পরিমাণে শক্তির প্রয়োজন হয়, যা কোশের পাওয়ার হাউস মাইটোকন্ড্রিয়া দ্বারা উত্পাদিত হয়। যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়াল প্রোটিন সংশ্লেষণ তার গঠন এবং হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল মাইটোকন্ড্রিয়াল প্রোটিনের ভারসাম্যের পরিবর্তন হার্টের স্বাস্থ্যকে কীভাবে প্রভাবিত করে বা আদৌ প্রভাবিত করে কিনা তা দেখা। স্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতায় মাইটোকন্ড্রিয়ার গুরুত্ব পূর্বেই স্বীকৃত এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে মাইটোকন্ড্রিয়াল বিপাকের পরিবর্তন হৃদরোগের কিছু ধরনের সাথে সম্পর্কিত। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে হৃৎপিণ্ডের বিকাশের সময় MRPS5 নামক একটি প্রোটিনের সম্পূর্ণ ক্ষতির ফলে হৃৎপিণ্ড তার কার্যক্ষমতা হারায় এবং ভ্রূণের মৃত্যুও হতে পারে এবং জন্মের পরবর্তী ক্ষেত্রে এই জিনের ক্ষতি হলে হৃৎপিণ্ড আকারে বড়ো হয়ে ওঠে ও পরে হার্ট স্তব্ধ হয়ে যায়। হৃদযন্ত্রের এই অস্বাভাবিকতার কারণ মাইটোকন্ড্রিয়া এবং কোশের নিউক্লিয়াসের মধ্যে যোগাযোগের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটতে পারে। গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। এই নতুন গবেষণায়, গবেষকরা দেখেতে চেয়েছেন MRPS5 প্রোটিন সম্পূর্ণরূপে না থাকার পরিবর্তে যদি হ্রাস পায় তবে তা কার্ডিওমায়োসাইট বিস্তারের উপর কী প্রভাব ফেলে। গুরুতর হার্ট অ্যাটাকের ফলে হার্টের বড়ো ধরনের ক্ষতি হয় এবং হার্ট আর স্বাভাবিকভাবে সংকোচন করতে সক্ষম না হওয়ায় হার্ট ফেইলিওর হতে পারে। এর কারণ হল প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মায়োকার্ডিয়ামের ক্ষতিগ্রস্ত কলা, নিজেকে মেরামত করতে অক্ষম। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে হার্টঅ্যাটাকের পরে প্রাপ্তবয়স্কর হৃৎপিণ্ডে মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যকলাপের সামান্য হ্রাস হৃদযন্ত্রের পুনর্জন্মকে সহজতর করতে পারে। এই অধ্যয়নটি হার্ট অ্যাটাক এবং অন্যান্য হৃদরোগের চিকিত্সায় এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। ডঃ ওয়াং বলেছেন এই পদ্ধতিটি হৃৎপিণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। জিন থেরাপি পদ্ধতি ব্যবহার করে হৃদযন্ত্রের পুনরায় বৃদ্ধি বা মেরামত সম্ভব হতে পারে।