শক্তিশালী হারিকেন স্থলভাগে আঘাত হেনে গাছ উপড়ে ফেলে, বাড়িঘর ধ্বংস করে চারদিকে তছনছ করে ফেলে। হ্যারিকেনের উৎপত্তিস্থল সমুদ্র, তাহলে সামুদ্রিক পরিবেশে কী ঘটে যখন জলস্তর ফুঁসে ওঠে, চারদিক তছনছ করে সামুদ্রিক প্রাণিদের কী ঘটে? হারিকেনের শক্তি ৬০ -ফুট তরঙ্গ তৈরি করতে পারে যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণ জলের সাথে গভীর সমুদ্রের ঠান্ডা জলকে একত্রিত করে। এর স্রোতে ৩০০ ফুটের মতো গভীর পলি আলোড়িত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বিস্তৃত উপকূলে সামুদ্রিক নানা প্রণির বসবাস সেখানে প্রায়ই হারিকেন আছড়ে পড়ে। ফ্লোরিডাতে উদ্ভিদ প্রবাল প্রাচীর, সামুদ্রিক ঘাসের তৃণভূমি ও নানা প্রাণির বৈচিত্র
ফ্লোরিডা গাল্ফ কোস্ট ইউনিভার্সিটির সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মেলিসা মে বলেছেন সব হারিকেনের প্রভাব এক নয়। একটা ঝড়ের ফলে যে ঢেউ ওঠে তা অস্বাভাবিক উচ্চ জোয়ারের মতো হলেও তাতে হারিকেনের সময়ে কিছু সামুদ্রিক পরিবেশ তুলনামূলকভাবে অব্যহত থাকতে পারে। কিন্তু ঝড়ের পরের পরিণতি বিধ্বংসী হতে পারে, লবণাক্ততার পরিবর্তন থেকে শুরু করে পলির স্তর বা ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে নিম্ন ব্যারোমেট্রিক চাপ, জলে তাপমাত্রার পরিবর্তন বা অনুরূপ সংকেত মাছদের সতর্ক করে যে ঝড় আসন্ন। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সমুদ্রপৃষ্ঠের জলে তরঙ্গ বৃদ্ধি ধূসর ট্রিগারফিশকে হারিকেনের আগে গভীর জলে যেতে প্ররোচিত করেছিল। ডলফিন এবং অন্যান্য সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীরা হারিকেনের পথ থেকে পালাতে না পারলে, তারা পুকুর, বাঁধ অন্যান্য মিষ্টি জলের জায়গায় আটকে পড়তে পারে যেখানে তাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
১৯৯২ -এর হারিকেন অ্যান্ড্রুর পরে, আনুমানিক ৯.৪ মিলিয়ন লবণাক্ত জলের মাছ মারা গিয়েছিল। তাদের ফুলকায় পলি আটকে বা চাপের পরিবর্তনে তাদের রক্তে মারাত্মক নাইট্রোজেন গ্যাসের বুদবুদ তৈরি হয়ে থাকতে পারে। একই ঝড়ে মিঠা জলের পরিবেশে পলি মিশে জলে অক্সিজেন ঘাটতি হয়, তাতে লুইসিয়ানায় আনুমানিক ১৮৭ মিলিয়ন মাছ মারা গেছে। সামুদ্রিক ঘাস এবং ঝিনুকের প্রাচীর পলিতে ঢাকা পড়ে যায়, হারিকেন ইয়ান প্রায় ২৫০টা বাচ্চা সামুদ্রিক কচ্ছপকে তীরে নিয়ে গেছে। কিছু প্রবাল ভেঙে সমুদ্রের নতুন অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়। হারিকেন আবার শীতল জল এনে প্রবাল ব্লিচিংয়ের কিছু প্রভাবকে কমাতে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু ঝড়ে প্রবাল প্রাচীর পুরো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
হারিকেনের জন্য কয়েক ডজন গাড়ি এবং নৌকা থেকে এস্টেরো উপসাগরে পেট্রল এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন জলপথে প্রবেশ করতে পারে, এর সাথে এন্টারোকক্কাস এবং ই. কোলির মতো ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আসে, মে বলেন। হারিকেন থেকে বৃষ্টি ও বন্যাও সামুদ্রিক পরিবেশে মিষ্টি জল নিয়ে আসে। এতে লবণাক্ততার পরিবর্তন হতে পারে। সামুদ্রিক প্রাণিরা লবণের ঘনত্বের কিছু পরিবর্তন সহ্য করতে পারে তবে তা দীর্ঘমেয়াদী সময়ের জন্য নয়। সানিবেল দ্বীপের কুমিরের ওপর , স্থলভাগে ঝড়ের কারণে সমুদ্রের লবণাক্ত জলের প্রভাব পড়েছিল। আবার ডলফিনের ওপরে মিষ্টি জলের নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। অ্যালগাল ব্লুমের জন্য সমুদ্রের জলে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না, ফলে সামুদ্রিক ঘাস অক্সিজেন বা আলো পায় না। ইকোসিস্টেমের ওপর এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকে, আর একটা ঝড়ের পর পর্যাপ্ত সময় লাগে সমুদ্রের আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে। মে জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তন হারিকেনের সংখ্যা নাও বাড়াতে পারে, তবে এতে তাদের তীব্রতা বাড়তে পারে, এই তীব্র ঝড় সমুদ্রের জীবনের জন্য খুবই খারাপ।