মস্তিষ্ক আমাদের চোখ দিয়ে দেখে তথ্য ব্যবহার করে যেভাবে বিশ্বের অভিজ্ঞতা তৈরি করে, মনোবিজ্ঞানে তা হল চাক্ষুষ উপলব্ধি। সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মস্তিষ্ক কীভাবে চাক্ষুষ উপলব্ধি করে তা বুঝতে অন্ধকার ল্যাবরেটরি কক্ষে অংশগ্রহণকারীদের কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে স্থিরভাবে বসতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের মাথার অবস্থানে স্থির রাখতে হয়, আর কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখে তাদের যেকোনো পরিবর্তনের নিরিখে প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। এইভাবে মানুষের উপলব্ধি সম্পর্কে এবং আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে বিশ্বকে বোঝে তার ধারণার ভিত্তি পরীক্ষাগারে তৈরি হয়। কিন্তু আমরা বাস্তবে প্রতিদিন যেভাবে বিশ্বকে অনুভব করি তার থেকে আলাদা এই কৃত্রিম সীমাবদ্ধ সেটিংসে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা সাধারণীকরণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে৷ এটি অনেকটা অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ অধ্যয়ন করে মাছের আচরণ বোঝার চেষ্টা করার মতো। আমাদের মস্তিস্ক শারীরিক ক্রিয়া সমর্থন করার জন্য বিকশিত হয়েছে, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে গবেষকরা দৈনন্দিন আচরণের মধ্যে হাঁটার সময় আমাদের চাক্ষুষ উপলব্ধি বোঝার চেষ্টা করেছেন।
গবেষকরা একটা সিমুলেটেড পরিবেশ ব্যবহার করে হাঁটার সময় অবিরাম অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টি ট্র্যাক করছিলেন, আর অংশগ্রহণকারীরা একটি ভার্চুয়াল বনে হাঁটতে হাঁটতে চলমান সাদা বৃত্তে সংক্ষিপ্ত ‘ফ্ল্যাশ’ শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। আমরা যেভাবে প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীতে হাঁটি তার পরিবর্তে, তারা একটা উন্মুক্ত জঙ্গলের সিমুলেশন করেছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা স্বাধীনভাবে তাদের অজানা এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আর গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে তাদের মাথার গতিবিধি ট্র্যাক করছিলেন। গবেষকরা মাথার নড়াচড়া ট্র্যাক করেছেন কারণ হাঁটার সময় আমাদের মাথা ওপরে আর নিচের দিকে দোলে। উভয় পা যখন মাটিতে থাকে তখন মাথার অবস্থান সর্বনিম্ন দিকে হয় আর হাঁটার সময় যখন পা উঁচুতে ওঠে তখন মাথা সর্বোচ্চ অবস্থানে থাকে। প্রতিটা অংশগ্রহণকারীর ” হাঁটার ধাপ-চক্র” এর পর্যায়গুলো চিহ্নিত করতে মাথার অবস্থানের পরিবর্তনগুলো দেখা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা হেঁটে যাওয়ার সময় ভিজ্যুয়াল টাস্ক অর্থাৎ ভিজ্যুয়াল “ফ্ল্যাশ” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শনাক্ত করা যায় তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছেন। পদচারণার ধাপ-চক্রের পর্যায়গুলোর সাথে চাক্ষুষ উপলব্ধি পুকুরের ঢেউয়ের মতো দোদুল্যমান ছিল। যখন পা মাটি থেকে ওপরে ওঠে সেই সময়ে চাক্ষুষ উপলব্ধি সর্বাধিক হয়। তারা দেখেছেন হাঁটার ধাপ-চক্রের পর্যায়গুলোর ওপর অংশগ্রহণকারীদের পরিবেশের পরিবর্তনগুলো অনুভব করার সম্ভাবনা, দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সময় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে। তবে ছন্দবদ্ধ হাঁটার সময় অংশগ্রহণকারী ভেদে পরিবর্তিত হয়। কীভাবে আমাদের মস্তিষ্ক দৈনন্দিন আচরণের সময় উপলব্ধি এবং কর্মের সমন্বয় সাধন করে তার সূত্র দিয়ে এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।