সৌর ঝড় বা সূর্য থেকে বিকিরণ একটা সাধারণ মহাকাশীয় ঘটনা, যা আমরা পৃথিবীতে বাস করে বিশেষ বুঝতে না পারলেও, মহাকাশচারীদের জন্য এটা উদ্বেগজনক বিষয়। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্সে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী ২০২১ সালে সূর্য থেকে হওয়া বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র ছিল যে এই বিস্ফোরণ একাধিক সৌরজগতের গ্রহে, উপগ্রহে অনুভূত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো, পৃথিবী, চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে স্থাপিত বিভিন্ন যন্ত্র এই শক্তিশালী সৌর বিস্ফোরণ রেকর্ড করেছে, যদিও এই সময়ে পৃথিবী আর মঙ্গল সূর্যের বিপরীত দিকে অবস্থান করছিল। যন্ত্রে ধরা পড়া এই সৌর বিস্ফোরণ সৌর ক্রিয়াকলাপ আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে, এবং মহাকাশে মানুষের নানা কাজের সময় এই ধরনের বিস্ফোরণের সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করতে পারবে। সূর্য মহাকাশে বিকিরণ এবং কণা ছড়িয়ে থাকে, যখন সূর্যের করোনাল ভর নির্গমন হয় তখন সূর্য বিলিয়ন টন উপাদান এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সৌরজগতে ছড়িয়ে দেয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যের বিপজ্জনক বিকিরণের আঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু পৃথিবীর বাইরের পরিবেশ বা মহাকাশ একটি বিপজ্জনক বিকিরণ পরিবেশ হিসাবে বিবেচিত হয়, এবং মহাকাশচারী যারা এতে সময় কাটান তাদের বিকিরণজনিত অসুস্থতার উচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে। বিশেষ করে শক্তিশালী করোনাল মাস ইজেকশন (CME) থেকে কণা বিকিরণের একটা ডোজই বিকিরণজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে, এটা যথেষ্ট উচ্চ স্তরে প্রায় 700 মিলিগ্রে পরিমাণ বিকিরণ ছড়ায়। যেখানে 10 মিলিগ্রে বিকিরণ দিন পনেরোর মধ্যে শরীরের পক্ষে মারাত্মক বলে প্রমাণিত হয়।
বিভিন্ন মহাকাশ সংস্থা বর্তমানে চাঁদ এবং মঙ্গল গ্রহে ক্রু মিশনের পরিকল্পনা করছে, মঙ্গলে বা চাঁদে সৌর বিকিরণ থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত বায়ুমণ্ডল নেই। তাই একটা CME কতটা শক্তিশালী হতে পারে এবং এটি কতদূর পৌঁছাতে পারে তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সৌর বিকিরণের সময়ে পৃথিবী এবং মঙ্গল গ্রহ সূর্যের বিপরীত দিকে অবস্থিত ছিল, যাদের মধ্যে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ১৫৫ মিলিয়ন মাইল, দূরত্ব ছিল। মঙ্গল পৃথিবীর চেয়ে সূর্য থেকে আরো দূরে অবস্থিত। সুতরাং CME সনাক্ত করে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রভাবগুলি কেমন হতে পারে তা অনুমান করতে পারবেন।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা একটা সুসংবাদ জানিয়েছেন, যখন একটি CME বিস্ফোরিত হয়, তখন বিজ্ঞানীরা সাধারণত কিছুটা আগাম সতর্কতা পান। একটি CME হওয়ার পরে কিছু সময় লাগে কণাগুলোর পৃথিবীতে বা পৃথিবী ছাড়িয়ে যেতে, মোটামুটি ১৫-১৮ ঘন্টা বা কয়েক দিন সময় লাগে। CME কতটা শক্তিশালী, কীভাবে ছড়াচ্ছে, তা জানা থাকলে, সৌর ঝড়ের কাছাকাছি আসার সময় মহাকাশ অনুসন্ধানকারীরা এর হাত থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।