কাজের কারণে বা অন্যান্য কিছু কারণে আমরা সারা সপ্তাহে পর্যাপ্ত ঘুমোতে পারিনা, তখন আমরা ভাবি যে সপ্তাহের শেষে ঘুমিয়ে সারা সপ্তাহের কম ঘুম পুষিয়ে নেব। কিন্তু পেন স্টেটের নেতৃত্বে নতুন গবেষণা বলছে এটা একটা ভুল। গবেষণায় বলছে, যদি ঘুম প্রতি রাতে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তবে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ সহ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য এক সপ্তাহেই অপর্যাপ্ত ঘুমের জন্য খানিকটা খারাপ হয়ে যায় আর সপ্তাহান্তে বেশি ঘুমিয়ে তা সারানোর চেষ্টা বিশেষ ফলপ্রসূ হয় না।
সাইকোসোম্যাটিক মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলছে, প্রতি রাতে সাত ঘন্টা ঘুম সুপারিশ করা হয়ে থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৬৫% প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে প্রতি রাতে সাত ঘন্টা ঘুমান। আর এটা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জৈব আচরণের সহযোগী অধ্যাপক অ্যান-মারি চ্যাং বলেছেন এই ঘুমের অভাব দীর্ঘমেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার রোগের সাথে যুক্ত তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
গবেষণায় ১১ দিনের স্লিপ স্টাডিতে অংশগ্রহণের জন্য ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ১৫ জন সুস্থ মানুষ নেওয়া হয়েছিল। প্রথম তিন রাতের জন্য, অংশগ্রহণকারীদের একটি বেসলাইন নেওয়ার জন্য প্রতি রাতে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমতে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী পাঁচ রাতে, অংশগ্রহণকারীদের ঘুম প্রতি রাতে পাঁচ ঘন্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তারপরে দুটো ঘুম পুনরুদ্ধারের রাত ছিল, যেখানে তাদের আবার প্রতি রাতে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমতে দেওয়া হয়েছিল। কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের ওপর ঘুমের প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য, গবেষকরা দিনে প্রতি দুই ঘন্টা অন্তর অংশগ্রহণকারীদের বসে থাকা অবস্থায় হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ পরিমাপ করেন।
গবেষণার প্রধান লেখক রেইচেনবার্গার বলেছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে হৃদস্পন্দন এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ উভয়ই প্রতিটি দিনের সাথে বৃদ্ধি পায় এবং ঘুম পুনরুদ্ধারের সময়কালের শেষেও এগুলো বেসলাইন স্তরে ফিরে আসেনি, অর্থাৎ বিশ্রামের অতিরিক্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, সপ্তাহান্তের শেষে, অংশগ্রহণকারীদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম পুনরুদ্ধার হয়নি। পরপর একাধিক, রাতের ঘুমের ক্ষতি থেকে আমাদের শরীর পুনরুদ্ধারের জন্য শরীরের দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম প্রয়োজন।
ঘুম যেমন এক জৈবিক প্রক্রিয়া, তেমন এটা এক ধরনের আচরণগত প্রক্রিয়া যার ওপর আমাদের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয়। ঘুম শুধুমাত্র আমাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে না, আমাদের ওজন, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা এবং অন্যদের সাথে সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে। যেহেতু আমরা ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে আরও বেশি ওয়াকিবহাল হচ্ছি, তাই ঘুমের ওপর নজর দিলে আমাদের স্বাস্থ্যও উন্নতি হবে।