বেশিরভাগ মানুষই বছরে একবার না একবার সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয় কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে কবে প্রথম মানুষের সাধারণ সর্দিকাশি শুরু করেছিল? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ অনেক ভাইরাস সর্দি-কাশির জন্য দায়ী কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকটি মানুষের দেহে সংরক্ষিত থাকে। সম্ভবত ৩০০,০০০ বছর আগে কিছু হোমো স্যাপিয়েন্স সর্দিকাশিতে আক্রান্ত হয়েছিল। সাধারণ ঠান্ডা লাগা বলতে আমরা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ জনিত কিছু রোগ বুঝি এবং যে সব ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ মৃদু হয়ে থাকে। এদের মধ্যে রয়েছে রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস এবং রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)। কিন্তু এই রোগজীবাণু মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ার আগে, অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীদের থেকে এই জীবাণু মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়েছে। সাধারণত, যখন একটি ভাইরাস প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের দেহে ঢুকে পড়ে, তখন এটি মানুষকে সংক্রামিত করতে ব্যর্থ হয় কারণ নতুন হোস্টের সাথে সেটি মানিয়ে নিতে পারেনা। কিন্তু কখনও কখনও একটি ভাইরাসের কিছু উপযুক্ত জিন থাকে যার সাহায্যে সে সফলভাবে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে বা একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়। ঠিক যেভাবে কোভিড-১৯ বা সোয়াইন ফ্লু-এর ভাইরাস আবির্ভূত হয়েছিল।
কিছু বিজ্ঞানীদের অনুমান প্রায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগে মানব সভ্যতার শুরুতে ভাইরাস প্রাণীর দেহ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যে সময় মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বাস করতে শুরু করে আর পশুপালনকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে ঠিক সেই সময় জীবাণু সহজেই প্রাণী থেকে মানুষে তারপর মানুষের থেকে অন্য মানুষদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।যদিও সব বিজ্ঞানী এই বিষয়ে সহমত পোষণ করে না। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট ফ্রাঙ্কোইস ব্যালোক্স বলেছেন মানুষ যখন থেকে শিকার করত তখন থেকেই তারা বিভিন্ন ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে। হোমো সেপিয়েন্সের আগে থেকেই আদিম মানুষ যেমন, হোমো ইরেক্টাসের মতো বিলুপ্ত মানব প্রজাতি যারা প্রায় ২ মিলিয়ন বছর আগে প্রথম আবির্ভূত হয়েছিল তারাও পশু শিকার করত। ব্যালোক্স-এর মতে মানুষের বিবর্তন ইতিহাস জুড়েই বিভিন্ন ধরনের সর্দিকাশির ভাইরাস বিভিন্ন সময়ে আসে এবং যায়। সম্ভবত মানুষের মধ্যে প্যাথোজেন সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায় যখন মানব সম্প্রদায় আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ সর্দির ভাইরাস মানুষের দেহে খুব ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায় না, কারণ এই ভাইরাসগুলো সাধারণত নরম কলাতে সংক্রমণের লক্ষণ রেখে যায়, যেমন ফুসফুস, যা মৃত্যুর সাথে সাথে নষ্ট হয়ে যায়।
ভাইরাল জিনোম যা প্রাচীন মানুষের দেহাবশেষে পাওয়া গেছে – তা শুধুমাত্র ডিএনএ- ভাইরাস। এর কারণ আরএনএ ডিএনএ-র চেয়ে দ্রুত হ্রাস পায় তাই পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন। এখনও পর্যন্ত, প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে কোনো আরএনএ ভাইরাস উদ্ধার করা হয়নি। গবেষকরা অনুমান করেন যে ভাইরাসের পূর্ববর্তী প্রকার প্রায় ৭০০,০০০ বছর আগের – সম্ভবত হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাবের অনেক আগে, শিম্পাঞ্জি বা গরিলা থেকে আদিম মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে, কিন্তু ঠিক কখন তারা তা করেছিল তা আজও অজানা। ভবিষ্যতে এই বিষয়ের উপর আরও গবেষণা প্রয়োজন।