গোড়ার দিকে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য সমাজমাধ্যমগুলো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে আনন্দের উৎস ছিল। কিন্তু ক্রমশই চিত্র পালটে যাচ্ছে। অনেকের জন্য এই সমাজমাধ্যম মনোরোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ‘ফিয়ার অব মিসিং আউট’, এখন চলতি শব্দ। কাছে বা দূরে থাকা পরিচিত বন্ধুবান্ধব, বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছবি আর ভিডিয়ো ভাগ করে নিয়ে যোগাযোগ রাখা মানসিক ভাবে আমাদের আনন্দই দেয়। বহু দিনের হারানো বন্ধুদের ফিরে পাওয়াও কম আনন্দের নয়। কিন্তু তার পর আস্তে আস্তে কারও কারও ক্ষেত্রে এই পোস্ট আত্মপ্রদর্শনী হতে শুরু করে। ‘লাইক’-এর লোভে, হাততালি পাওয়ার আনন্দে, ‘আমিও আছি’-র ভিড়ে অজানতেই আমাদের রুচির অবনমন ঘটতে থাকে।
জার্মানির ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ড. ফিলিপ ওজিমেকের নেতৃত্বে গবেষকরা তাদের অনলাইন সমীক্ষার জন্য ১২৩০ জনকে নিয়োগ করেছেন। অংশগ্রহণকারীদে সপ্তাহে অন্তত একবার একটি সামাজিক মিডিয়া চ্যানেল ব্যবহার করতে হয়েছে। গড়ে, অংশগ্রহণকারীরা দিনে দু ঘন্টার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করেছে। গবেষকরা তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন অনেকের মধ্যে একটি শক্তিশালী বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং অন্যদের সাথে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা দেখা গেছে। এই তুলনা সামাজিক মিডিয়াতে করা খুব সহজ, প্রাথমিকভাবে প্যাসিভ ব্যবহারের মাধ্যমে, অর্থাৎ অন্যান্য ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা বিষয়বস্তু দেখে। বস্তুবাদ এবং প্যাসিভ ব্যবহারও সামাজিক মিডিয়াকে আসক্তিমূলক করে তোলে। ব্যবহারকারীরা ক্রমাগত সংশ্লিষ্ট চ্যানেল সম্পর্কে চিন্তা করে, ভয় পায়, মনে করে অনলাইনে যোগাযোগ না থাকলে তারা হয়তো কিছু হারিয়ে ফেলবে। এর ফলে মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে, মানুষের মনে দানা বাধে চাপ। ছবি, ভিডিয়ো, বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখালিখি, রিল এ সব দেখতে দেখতে কখন যে সময় বয়ে যায়, টের পাওয়া যায় না। এই ব্যস্ততার যুগে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম থেকে সাময়িক বিনোদন খুঁজে নেন অনেকেই। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক বেশি স্ক্রল করলে মানসিক অবসাদ আর উদ্বেগ বাড়তে থাকে। আর মানসিক উদ্বেগ ও অবসাদ যদি দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যায়, তবে তা গুরুতর শারীরিক সমস্যা ডেকে আনতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে গবেষণাটি প্রমাণ করে যে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ঝুঁকির প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে বিশেষ করে যারা খুব বস্তুবাদী মানসিকতার। এই বিষয়টি উদ্বেগজনক, কারণ সোশ্যাল মিডিয়া বস্তুবাদী মূল্যবোধকে ট্রিগার করে তাকে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফিলিপ ওজিমেক সুপারিশ করেন যে সোশ্যাল মিডিয়াতে কতটা সময় ব্যয় করা যেতে পারে এবং এটি হ্রাস করা বিষয়ে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ভাবতে-ভুলিয়ে-দেওয়া এই প্রযুক্তির প্রতি আমাদের দাসত্ব স্বীকার না করে আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।