সারা বিশ্বে বহু মানুষ বিষাক্ত সাপের কামড় খান, তাদের মধ্যে শিশু ও কৃষকদের সংখ্যাই বেশি। প্রতি বছর সাপের কামড়ে প্রায় ১৩৮০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। তাছাড়াও সাপের কামড় খাওয়ার পরেও যারা বেঁচে যান, তারা অনেকেই সারা জীবন শরীরে এর আঘাত বয়ে বেড়ান,অনেকে এর থেকে অতীব মানসিক আঘাতও পান।
সাপের বিষের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল নিউরোটক্সিন। এই টক্সিনগুলো স্নায়ু সংকেতকে মস্তিষ্ক থেকে পেশিতে যেতে বাধা দেয়, ফলে পেশিগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। এই টক্সিনের জন্য ফুসফুসের সংকোচন প্রসারণ পেশিগুলো অবশ হয়ে যায় ফলে এদের শিকার যেকোন প্রাণী বা মানুষের শ্বাস দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা মারা যায়। আফ্রিকান ব্ল্যাক মাম্বা, এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশের শঙ্খচূড়, গোখরা, কাল কেউটের বিষ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক নিউরোটক্সিন মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সব সাপের বিষে নিউরোটক্সিন থাকে না, কিছু সাপের বিষে হেমোটক্সিন থাকে, যা রক্তপাত ঘটায়, কিছু বিষে সাইটোটক্সিন থাকে, যা ত্বক এবং হাড়কে ধ্বংস করে।
অ্যান্টিভেনমের সক্রিয় উপাদান হল অ্যান্টি-টক্সিন অ্যান্টিবডি। অল্প পরিমাণে সাপের বিষ নিয়ে ঘোড়াকে ইনজেকশন দিয়ে অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে তৈরি করা হয়। অ্যান্টিভেনম তৈরির এই পদ্ধতি এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে অনুসরণ করা হয়, যদিও এর অনেক ত্রুটি আছে। ঘোড়াতে তৈরি হওয়া অ্যান্টিভেনম মানুষের শরীর বহিরাগত বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে, যাতে নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাছাড়া অ্যান্টিভেনম প্রজাতি অনুসারে পালটে যায় বলে অনেক রকম অ্যান্টিভেনমও প্রয়োজন হয়।
সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে পরীক্ষাগারে এমন এক অ্যান্টিবডি তৈরি করা গেছে যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরণের সাপের বিষে থাকা নিউরোটক্সিন প্রশমন করতে পারে। ল্যাব-নির্মিত অ্যান্টিবডি 95Mat5, নানা ধরনের ৫০ বিলিয়ন অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার পরে আবিষ্কৃত হয়েছে, যা অনেক প্রজাতির বিষের নিউরোটক্সিন চিনে তার মারাত্মক প্রভাবগুলো নিরপেক্ষ করতে সক্ষম। পরীক্ষায় বিষের প্রাণঘাতী ডোজ পাওয়া ইঁদুরের মধ্যে 95Mat5 ইনঞ্জেকশন দিয়ে নানা সাপের বিষ থেকে ইঁদুরের মধ্যে যে পক্ষাঘাত এবং মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা প্রতিরোধ করা গেছে। বিভিন্ন নিউরোটক্সিনের ক্ষেত্রে ল্যাবে নির্মিত এই অ্যান্টিভেনম কার্যকর হলেও, হেমোটক্সিন ও সাইটোটক্সিনের জন্য একটা অ্যান্টিভেনম প্রয়োজন।
এই 95Mat5 অ্যান্টিভেনম কার্যকর থাকার জন্য রেফ্রিজারেটরে ঠাণ্ডায় রাখতে হয়, গরম দেশে এর বিতরণের সমস্যা দূর করা দরকার। আর এটা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ ইঞ্জেকশন হবে, তাই দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছোনোর জন্য এর দাম আয়ত্তের মধ্যে থাকা দরকার।