সৌরজগতের বহু ছবি দেখে মনে হয় যেন মহাকাশের সবকিছু নিখুঁত, কেন্দ্রীভূত বৃত্তে সাজানো। বিভিন্ন গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ঘোরে আবার উপগ্রহ গ্রহগুলোকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু আসলে ঘটনাটা একটু ভিন্ন। গ্রহ বা উপগ্রহের এই কক্ষপথের আকার বিভিন্ন হতে পারে। ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী পল উইগার্ট জানান গ্রহ এবং মহাজাগতিক বস্তু খুব কমই নিখুঁত বৃত্তে ঘোরে। ধূমকেতুর হাইপারবোলিক কক্ষপথ রয়েছে আবার গ্রহাণু গ্রহের চারপাশে লুপের মতো জটিল পথে ভ্রমণ করে। এমনকি চাঁদের কক্ষপথও টলমল করছে, পৃথিবীর চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে বছরের পর বছর ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল এই বৈচিত্র্যময় পথগুলো কীভাবে তৈরি হয়?
এর কারণ অনুধাবন করতে হলে মহাকাশে গতির ধারণা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। কক্ষপথের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান শক্তি কাজ করে। প্রথমটি হল ভরবেগ: যখন একটি বস্তু গতিশীল অবস্থায় থাকে, তখন তার ভরবেগ তাকে নির্দিষ্ট দিকে চালিত করে। দ্বিতীয়টি হল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। গ্রহের মতো বড়ো বস্তুর, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনেক বেশি ফলত তা চলমান বস্তুকে তাদের দিকে আকর্ষণ করে। একসাথে, ভরবেগের ধাক্কা এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান কক্ষপথ তৈরি করে। মাধ্যাকর্ষণ এবং ভরবেগ ভারসাম্যপূর্ণ হলে কক্ষপথ তাত্ত্বিকভাবে একটি উপবৃত্তকার বা ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। সপ্তদশ শতকে, জার্মান বিজ্ঞানী জোহানেস কেপলার গ্রহের গতিবিধি ব্যাখ্যা করার জন্য গাণিতিক মডেল তৈরি করেছিলেন। কেপলারের আগে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন গ্রহগুলো নিখুঁত বৃত্তে ঘোরে। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ, যা আমাদের সৌরজগতের সমস্ত গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে উপবৃত্তাকার, সেই মডেলের সাথে খাপ খায় না। কেপলার প্রথম চিহ্নিত করেছিলেন মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার এবং সেইসঙ্গে তিনি অন্যান্য গ্রহের পথও ব্যাখ্যা করেছিলেন।
অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিটাল ডাইনামিকসের অধ্যাপক রেনু মালহোত্রা বলেছেন বাস্তবে, একটি বস্তুর উপর ভরবেগ এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সর্বদা পরিবর্তিত হয়। যদি ভরবেগ খুব শক্তিশালী হয়, অথবা মাধ্যাকর্ষণ খুব দুর্বল হয়, তবে বিভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ ধূমকেতুকে আকর্ষণ করে, আবার ধূমকেতুর ভরবেগ খুব বেশি। তাই তাদের গ্যালাক্সির মধ্য দিয়ে এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে যেতে দেখা যায় এবং একটি দীর্ঘ ডিম্বাকৃতির কক্ষপথ তৈরি করে। গবেষকদের মতে মহাবিশ্বের বিশাল সংখ্যক মহাজাগতিক বস্তুও কক্ষপথের গঠনকে জটিল করে তোলে। বেশি সংখ্যক মহাজাগতিক বস্তু এবং তাদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অন্যান্য গ্রহ বা মহাজাগতিক বস্তুর গতিপথকে পরিবর্তিত করে বা আরও জটিল পথে পরিণত করতে পারে।