হারমিট ক্র্যাব বাংলায় বললে সন্ন্যাসী কাঁকড়া। বিভিন্ন প্রজাতির এই কাঁকড়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিম ক্যারিবিয়নের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। স্থলজ কাঁকড়াগুলো উপকূলরেখার কাছাকাছি বাস করে এবং এদের ডাঙা এবং জল দুয়েরই প্রয়োজন থাকে। সাগরতীরে জোয়ারের সময় জলের মধ্যে ডুবে থাকলেও ভাটার সময় জলের উপরে ভেসে ওঠে। হারমিট ক্র্যাবের দশ জোড়া ঊপাঙ্গ থাকে এবং এরা অ্যানোমুরান ডেকাপড ক্রাস্টেসিয়ানের অন্তর্গত। নামে কাঁকড়া হলেও, কাঁকড়ার সাথে এদের খুব একটা মিল নেই কারণ এদের শরীরে কোনো খোলস নেই। অধিকাংশ সন্ন্যাসী কাঁকড়া প্রজাতি নরম তলপেটের অধিকারী । মৃত শামুকের খোলসের ভেতর ঢুকে এরা নিজেদেরকে শিকারীদের থেকে রক্ষা করে আর খোলসটা তারা সবসময় পিঠে করে বয়ে বেড়ায় । এই খোলস তাদের নরম পেটকে শুকিয়ে যাওয়া থেকেও রক্ষা করে। বয়সের সাথে সাথে দেহের আকার বৃদ্ধি পেলে এরা তাদের পুরানো খোলসটি ছেড়ে অপেক্ষাকৃত বড়ো আকারের আরেকটি খোলস খুঁজে নেয় । এভাবে বার বার পুরানো বাসস্থান পেছনে ফেলে যাওয়ার আচরণ থেকেই সন্ন্যাসী কাঁকড়া নামকরণ ঘটেছে ।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে কিছু সংখ্যক স্থলজ সন্ন্যাসী কাঁকড়া সমুদ্র সৈকতের আবর্জনার মধ্যে পাওয়া প্লাস্টিকের বস্তুকে তাদের কৃত্রিম খোলস হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেছে। মানুষের বিভিন্নধরনের ক্রিয়াকলাপরে কারণে প্রকৃতিতে শামুকের মতো খোলসযুক্ত প্রাণীদের খোলসের অভাব ঘটছে। তাছাড়াও দূষণের ফলে পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। মনে রাখা প্রয়োজন বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক দূষণের প্রায় ৮৫% প্লাস্টিক দূষণের কারণে ঘটছে এবং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পৃথিবীতে এই সমুদ্রের জলের দূষণ ঘটে নদীর মাধ্যমে আসা প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে যা উপকূলরেখা অঞ্চলে জমা হয়। গবেষকরা আরও বলেন যে পুরুষ কাঁকড়ার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আসা স্ত্রী সন্ন্যাসী কাঁকড়ারা এই রঙিন কৃত্রিম উপকরণে বেশি আকর্ষিত হচ্ছে। হালকা কৃত্রিম খোলস বহন করে বেড়ানোর ফলে পুরুষ কাঁকড়াদের শরীরে শক্তি সঞ্চিত থাকছে। উপরন্তু ডাইমিথাইল সালফাইডের একটি গন্ধের সংকেত, প্রাকৃতিক খোলস এবং সামুদ্রিক বর্জ্য উভয়েই পাওয়া যায় তাই দুটির মধ্যে ভেদাভেদ করা কঠিন। গবেষকরা মনে করেন দূষিত এলাকায় পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য ও ছদ্মবেশ ধারণ করতে এই কৃত্রিম খোলসগুলো আরও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে।
সমস্যা সত্যিই বড়ো আকার ধারণ করছে। পৃথিবীতে এখন প্লাস্টিকের উৎপাদন বছরে ৩০ কোটি টন। এর অনেকাংশের শেষ ঠিকানা সমুদ্র। গবেষকরা সামুদ্রিক প্রাণীর রক্ত এমনকি মাংসপেশিতেও প্লাস্টিক কণার সন্ধান পাচ্ছেন। এ সব আবিষ্কার বাড়াচ্ছে চিন্তা। সমুদ্রের মাছ তো মানুষের খাদ্য। তা হলে কি আমাদের আবর্জনা আমরাই খাচ্ছি?