বেশিরভাগ প্রাণীর শিশুর তুলনায় মানব শিশু খুব অসহায়। ছাগল, ঘোড়া, মুরগির মতো অনেক প্রাণীই জন্মানোর পরেই হাঁটতে পারে। কিন্তু মানব শিশু জন্মের পর দীর্ঘ সময় অসহায় অবস্থায় থাকে, সে অন্যের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল, তার এই দীর্ঘ সময় যাবত অসহায়ত্ব তাকে ঝুঁকির মুখেও ফেলে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসেও মানবশিশুর এই অবস্থাই স্থায়ী হয়ে রয়ে গেছে।
১৯৬০ এর দশকে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, মানব শিশুর অসহায়ত্বের কারণ হল তাদের জন্মকালীন সীমাবদ্ধতা। তাদের বিশ্বাস ছিল মানব শিশু অপরিণত বড়ো মাথা নিয়ে জন্মায়, আর এই অপরিণত মস্তিষ্কের জন্য তাদের এক বছর বয়স পর্যন্ত একটা অসহায় সময়কাল দেখা যায়। মানব শিশু কেন এত দীর্ঘ সময়ের জন্য অসহায় অবস্থায় থাকে তা জানতে প্রফেসর রোডরি কুসাক, কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক নিউরোইমেজিং ব্যবহার করে শিশুর মস্তিষ্ক ও মনের বিকাশ পরিমাপ করেন, আমেরিকার অবার্ন ইউনিভার্সিটি প্রফেসর ক্রিস্টিন চার্ভেট, প্রজাতি জুড়ে মস্তিষ্কের বিকাশের তুলনা করেন এর সাথে ড. মার্ক’অরেলিও রনজাটো, ডিপমাইন্ডের একজন সিনিয়র এআই গবেষক ছিলেন। গবেষকরা মানব শিশুর মস্তিষ্কের ইমেজিং ব্যবহার করে দেখেছেন যে মানব শিশুর মস্তিষ্কের প্রচুর সিস্টেম কাজ করছে আর ইন্দ্রিয় থেকে তারা সমৃদ্ধ তথ্যের প্রবাহ প্রক্রিয়া করে চলেছে। অর্থাৎ দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত বিশ্বাস শিশুর মস্তিষ্কের সিস্টেম কাজ করার জন্য খুব অপরিপক্ক, এই গবেষণা সরাসরি তার বিরোধিতা করে। গবেষকরা মানুষের শেখার সাথে মেশিন লার্নিং মডেলের তুলনা করেন। এখানে গভীর নিউরাল নেটওয়ার্ক তথাকথিত ‘অসহায়’ অবস্থা প্রাক-প্রশিক্ষণের সময়কাল থেকে উপকৃত হয়।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলকে প্রাথমিকভাবে প্রাক-প্রশিক্ষিত করা হয় যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন না করেই তা প্রচুর পরিমাণে ডেটার মধ্যে প্যাটার্ন দেখতে পায়। তারপর ফাউন্ডেশন মডেল পরবর্তীতে নির্দিষ্ট কাজ শিখতে ব্যবহার করা হয়। দেখা গেছে এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন কাজ দ্রুত শিখতে পারে আর তার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের মতে মানব শিশুরা একইভাবে ‘অসহায়’ সময়কাল জুড়ে শক্তিশালী ফাউন্ডেশন মডেলের প্রাক-প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকে যা তাকে পরবর্তী জীবনে উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং দ্রুত সাধারণীকরণ করতে সাহায্য করে। এর সাথে শক্তিশালী মেশিন লার্নিং মডেলের খুব মিল আছে যেমন OpenAI-এর ChatGPT বা Google-এর জেমিনি। গবেষকরা বলছেন যে শিশুরা কীভাবে শিখতে পারে সে সম্পর্কে ভবিষ্যতের গবেষণা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলের পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করুন। শিশুরা কীভাবে শেখে তা বুঝলে পরবর্তী প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলে তা কাজে লাগানো যেতে পারে।