বাচ্চা চোখ ঘষতে থাকলে মায়েরা বুঝতে পারে তাদের ঘুম পেয়েছে। কিন্তু শিশুরা কী ক্লান্ত হলে চোখ ঘষে? চোখ ঘষার উদ্দেশ্য কী? প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ক্লান্ত হলেও তারা চোখ ঘষতে থাকে। শরীরের মধ্যে একটা অস্বস্তি অনুভূত হয় যে চোখের পেশিগুলি অতিরিক্ত পরিশ্রম করছে এখন তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন। শিশুরাও যখন তাদের আশেপাশের বস্তুর দিকে অনেকক্ষণ পলক না ফেলে তাকিয়ে থাকে, তখন কম পলক পড়ার জন্য তাদের চোখ শুকিয়ে যায় ফলে তাদের চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আলাস্কা চিলড্রেনস আই অ্যান্ড স্ট্র্যাবিসমাস-এর চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রবার্ট ডব্লিউ আর্নল্ড বলেন, স্বাস্থ্যকর চোখের জলে তিনটে স্তর থাকে। চোখের জলের পৃষ্ঠে মিউকাস বা শ্লেষ্মা, মাঝে লবণাক্ত জল এবং চোখের পাতার মেইবোমিয়ান গ্রন্থি থেকে বাষ্পীভবন রোধ করার জন্য তেলের একটা স্তর থাকে। এই ত্রি-স্তরযুক্ত চোখের জল পুনর্নবীকরণ করতে আর মসৃণভাবে চোখের পৃষ্ঠের উপরে ছড়িয়ে দিতে চোখের পলক পড়ে। যখন আমরা খুব মন দিয়ে কিছু চাক্ষুষ করতে থাকি তখন আমরা বেশিবার পলক ফেলি না। পর্যাপ্ত পলক না পড়লে চোখের জলের ত্রি-স্তর ভেঙে যেতে পারে এবং কর্নিয়ার পৃষ্ঠে শুকনো ছোপ পড়ে। কর্নিয়া হল চোখের বাইরের, পরিষ্কার অংশ যা আইরিস এবং মণিকে ঢেকে রাখে। তাই চোখ শুকনো হয়ে গেলে আমরা অজান্তে চোখ ঘষতে থাকে, যা চোখকে বেশিবার পলক ফেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা যেমন বেশিক্ষণ ঠিকমতো নিঃশ্বাস না নিলে তারপর জোরে জোরে শ্বাস নিই, তেমনই বাচ্চাদের চোখ ঘষা অক্ষিগোলকের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার মতো কাজ করে। তবে বেশি চোখ ঘষলে, তার ফলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে।
ট্রাইগেমিনাল স্নায়ু মস্তিষ্ক থেকে চোখে এবং ভেগাস স্নায়ু মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে যায়। আমরা যখন ক্লান্ত হয়ে যাই তখন চোখ ঘষতে ভাল লাগে কারণ এতে ট্রাইগেমিনাল এবং ভেগাস স্নায়ু উদ্দীপিত হয়ে রক্তচাপ হ্রাস করে। এটা অকুলোকার্ডিয়াক রিফ্লেক্স নামে পরিচিত, এতে কিছু ব্যক্তির মধ্যে ২০% এর বেশি হৃদস্পন্দন হ্রাস দেখা যায়। তবে ডাঃ আর্নল্ডের মতে অকুলোকার্ডিয়াক রিফ্লেক্স উদ্দীপ্ত করতে শিশুরা চোখ ঘষে না, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো তাদের চোখ শুকনো হয়ে পড়লে ক্লান্ত হয়ে যায়, আর তারা ঘুমের জন্য প্রস্তুত হয়।