গবেষকরা দেখেছেন যে শৈশবে যে ধরনের মৌখিক ভাষা শিশুর প্রতি ব্যবহার করা হয় তা সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন, কারণ পিতামাতা এবং অন্যান্য বয়স্করা এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। কিছু সংস্কৃতিতে এটিকে এক ধরনের শৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার উপায় বলে মনে করা হয়। কিন্তু শৈশবে মৌখিক ভাষা অপব্যবহারের মধ্যে এমন কিছু আচরণ জড়িত যা একটি শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, যেমন কটূক্তি করা, চিৎকার করা এবং হুমকি দেওয়া। দেখা গেছে যে এই সব আচরণ শিশুর সারা জীবন জুড়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে, অন্তর্নিহিত মানসিক এবং মনস্তাত্বিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে রাগ, বিষণ্নতা, জিনিস নষ্ট করা, নিজের ক্ষতি এবং স্থূলতার ঝুঁকি থাকে। গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের সাথে মৌখিক খারাপ ব্যবহার করছেন তা নিজেরা শনাক্তকরণ করতে পারলে, তা মৌখিক ভাষার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের সূত্রপাত হবে।
পিটার ফোনাগি, ইউসিএল সাইকোলজি অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক বলেছেন, এই পদ্ধতিগত পর্যালোচনা সময়োপযোগী এবং ক্লিনিকাল ক্ষেত্রের জন্য এটি তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুদের প্রতি দুর্ব্যবহার রোধ করলে সবচেয়ে কার্যকরভাবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার প্রকোপ কমানো সম্ভব। পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা শৈশবে মৌখিক নির্যাতনের প্রধান অপরাধীর হলেন পিতামাতা (৭৬.৫%) বাড়ির অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্ক যারা শিশুর দেখা শোনা করে (২.৪%) এবং শিক্ষক (১২.৭১%) এছাড়া অন্যান্যরা হলেন কোচ (০.৬%) এবং পুলিশ (০.৬%)। চিৎকার, চেঁচামেচি হল মৌখিক ভাষা অপব্যবহারের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য। গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে যে শৈশব মৌখিক ভাষা অপব্যবহারের সংজ্ঞায় শুধুমাত্র ব্যবহৃত শব্দগুলিই বিবেচনা করলে চলবে না; বরং শিশুকে বকার অভিপ্রায়, কীভাবে তা বলা হল এবং শিশুদের উপর তাৎক্ষণিক প্রভাবও বিবেচনা করতে হবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, যে তারা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অপরাধীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে ভালো অগ্রগতি দেখেছেন যা এই ধরনের অপব্যবহার কিছুটা হ্রাস করেছে। এখন যদি ভুক্তভোগীদের মধ্যে শুধুমাত্র মানসিক অপব্যবহারের পরিবর্তে মৌখিক ভাষা অপব্যবহারের দিকে মনোনিবেশ করেন, তাহলে তারা শৈশবকালীন মৌখিক ভাষা অপব্যবহার এবং এর পরিণতি রোধ করার জন্য অনুরূপ পদক্ষেপ গড়ে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন।
জেসিকা বন্ডি, ‘ওয়ার্ডস ম্যাটার’ -এর প্রতিষ্ঠাতা, এটি একটি নতুন দাতব্য সংস্থা, যা প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা শিশুদের জীবনে মৌখিক অপব্যবহার কমিয়ে শিশুদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বাড়ানোর মিশনের সাথে যুক্ত। জেসিকা বন্ডি বলেছেন, শৈশবে মৌখিক অপব্যবহারের প্রকৃত মাত্রা এবং প্রভাব উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সমস্ত প্রাপ্তবয়স্করা মাঝে মাঝে অত্যন্ত চাপে থাকেন যার জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে তারা শিশুদের কিছু বলে ফেলেন। এই ক্রিয়াগুলিকে চিনতে আমাদের সকলের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে প্রাপ্তবয়স্করা শিশুদের প্রতি মৌখিক খারাপ ভাষা না বলেন এর ফলে শিশুরা উন্নতি করতে পারে। তিনি সকলকে ডাক দিয়েছেন, শব্দের ওজন আছে, তারা মানুষকে জাগ্রত বা ধ্বংস করতে পারে। আসুন সবাই মিলে শিশুদের গড়ে তুলি, তাদের হারিয়ে যেতে দেব না।