বড়ো শহরগুলোর উজ্জ্বল আলোর ফলে কিছু পাখির চোখ ছোটো হচ্ছে, তা গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। নতুন গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঘটনা পাখিদের জন্য একটা বিবর্তনীয় অভিযোজন। গবেষকরা দেখেছেন যে পাখিদের মধ্যে দু ধরনের সং বার্ড, নর্দার্ন কার্ডিনাল এবং ক্যারোলিনা রেন, যারা টেক্সাসের সান আন্তোনিও শহরের কেন্দ্রে সারা বছর বসবাস করে, তাদের চোখ ওই অঞ্চলের অনুজ্জ্বল উপকণ্ঠে বসবাসকারী একই প্রজাতির সদস্যদের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ ছোটো ছিল। কিন্তু গবেষকরা দুই প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, পেইন্টেড বান্টিং এবং হোয়াইট-আইড ভিরিওর, , যারা বছরের বেশিরভাগ সময় শহরের যে অংশেই বসবাস করত না কেন, তাদের ক্ষেত্রে চোখের আকারের কোন পার্থক্য খুঁজে পাননি
এই গবেষণায় সান আন্তোনিওর কেন্দ্রীয় ও প্রান্ত অঞ্চলের ৫০০ টিরও বেশি পাখি অধ্যয়ন করা হয়েছে। গবেষকরা পাখিদের শরীরের এবং চোখের আকার তুলনা করেছেন এবং প্রতিটি এলাকার দিন এবং রাতে শব্দ এবং আলোর পরিমাপ বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন যে নগরের কেন্দ্রে বসবাসকারী সংবার্ডদের চোখ শহরের প্রান্তে বসবাসকারী একই প্রজাতির সদস্যদের তুলনায় ছোট, কিন্তু তারা পেইন্টেড বান্টিং- এর মতো পরিযায়ী পাখিদের চোখের আকারের কোনো পার্থক্য খুঁজে পাননি। এই অনুসন্ধান থেকে অনুমান করা হচ্ছে যে পরিযায়ী পাখিদের শহরের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে। গ্লোবাল চেঞ্জ বায়োলজিতে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পাখির জনসংখ্যার দ্রুত হ্রাসের মধ্যে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার প্রভাব রয়েছে। এই সমীক্ষা বলা হয়েছে আবাসিক পাখিগুলি সময়ের সাথে সাথে শহুরে অঞ্চলে মানিয়ে নিতে পারে, তবে পরিযায়ী পাখিরা অভিযোজিত হচ্ছে না, এর কারণ হতে পারে তারা যেখানে শীতকাল কাটায়, সেখানে মানব সৃষ্ট আলো এবং শব্দের চাপ কম থাকে। প্রজনন ঋতুতে শহরের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া তাদের পক্ষে আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক স্মিথসোনিয়ান মাইগ্রেটরি বার্ড সেন্টারের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো জোনস বলেন, ছোটো চোখের আকার পাখিদের শহরের পরিবেশে উজ্জ্বল এবং অনবরত বিরাজমান আলোর সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম করতে পারে। এই শহরের আলোর ঝলকে বড়ো চোখওয়ালা পাখিরা কিছুটা অন্ধ হয়ে যেতে পারে বা ভাল ঘুমাতে পারবে না, অর্থাৎ শহরাঞ্চল তাদের অসুবিধায় ফেলে। জোনস বলেছেন মানুষের কিছু অনিচ্ছাকৃত কাজের প্রভাবে পাখিদের এমন পরিণতি হচ্ছে যা আমরা তখন বুঝতে পারি না । এই অভিযোজনগুলো শহরের রাস্তায় বসবাসকারী পাখিদের জন্য ভাল বা খারাপ কী পরিণতি ঘটাচ্ছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। দিন দিন সভ্যতার অগ্রগতির সাথে শহুরে পরিবেশ কমে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে আসার সম্ভাবনা বিশেষ নেই। কিন্তু এই বিষয়ে জানা প্রয়োজন যে পাখিদের জন্য এই ধরনের পরিবেশ কীভাবে পরিচালনা করা যায় যাতে যে পাখিরা শহুরে বাসস্থানে অভিযোজিত নয় তারা নিরাপদে বসবাস করতে পারে। বর্তমান গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে মানুষের দ্বারা সৃষ্ট আলোর মতো সংবেদনশীল দূষকগুলিও শহরের জীবনের সাথে মোকাবিলা করার জন্য পাখির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।