কোভিড লকডাউনের সময় মানুষ যখন গৃহবন্দী, প্রকৃতি তখন আবার নিজস্ব ছন্দে ফিরতে শুরু করেছিল। শহরের যে সমস্ত স্থান কোলাহলমুখর, গাড়ির ভিড়ে জমজমাট থাকত সেইসব স্থান লকডাউনে কিছুকাল নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আগে দেখা যেত না এমন সব পশু দেখা যেতে থাকল। প্রকৃতি কি তবে ক্ষত সারিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছিল?
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংরক্ষণ জীববিজ্ঞানী কোল বার্টন এবং তার সহকর্মীরা ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ২১টা দেশের ১০২টা স্থানের মহামারীর আগে এবং মহামারী চলাকালীন ৫৪০০টা ক্যামেরার তথ্যবন্দী করেছেন। তারা দেখেছেন বিপদ এড়াতে মানুষকে বেশিরভাগ প্রাণীই এড়িয়ে চলে। কিন্তু পৃথিবী জুড়ে ৮ বিলিয়ন মানুষকে এড়িয়ে চলাফেরা করা প্রাণীর পক্ষে বেশ কঠিন কাজ।
গবেষকরা মোট ৩০০০০০ ক্যামেরা দিনে স্তন্যপায়ী প্রাণীর কার্যকলাপের তুলনা করেছেন। তারা দেখেছেন মানব-পরিবর্তিত আবাসস্থলে, প্রাণীদের কার্যকলাপ মানুষের কার্যকলাপের সাথে প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু প্রাণীদের কার্যকলাপ রাতে দেখা যেত, অর্থাৎ তাদের মধ্যে নিশাচর অভ্যাস দেখা গেছে। গবেষকদের তত্ত্ব অনু্যায়ী এই পরিবেশে টিকে থাকতে অন্যান্য প্রাণীরা মানুষের নৃতাত্ত্বিক সম্পদে আকৃষ্ট হলেও তারা মানুষের সাথে মুখোমুখি হওয়া যতটা পারে এড়াতে চায়।
ভ্যাঙ্কুভারের কাছে লকডাউনের পরে একটা শহরের পার্ক পুনরায় খোলার পরে কালো লেজযুক্ত হরিণ (ওডোকোইলিয়াস হেমিওনাস)প্রচুর দেখা যেতে লাগল। কারণ হরিণ শিকারী কুগাররা লকডাউনের সময় মানুষের অনুপস্থিতিতে বেশি দেখা যেত, ফলে হরিণ আসা কমে গিয়েছিল। পার্ক খোলার পর মানুষ আসার কারণে কুগারের সংখ্যা কমে গেল, তাই এই হরিণের কার্যকলাপ বাড়তে থাকল। দেখা গেছে মাংশাসী প্রাণীরা মানুষের ক্রিয়াকলাপের সাথে সবচেয়ে বেশি সম্পর্কিত। মানুষের অনুপস্থিতিতে তাদের আনাগোনা বাড়ে, আর মানুষের উপস্থিতিতে তারা সরে যায় বা রাতে তাদের দেখা যায়। গবেষকদের বক্তব্য মানুষ ও মাংসাশী প্রাণীরা মুখোমুখি হলে তা মাংশাসী প্রাণীদের পক্ষে ঝুঁকিযুক্ত; কিন্তু মাংসাশীরা বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাদের পরামর্শ হল শহরাঞ্চলে বা দূরবর্তী এলাকায় মানুষের রাতে কাজকর্ম কমানো দরকার যাতে বন্যপ্রাণীরা এই সময়ে নিজেদের আচরণ ও ধর্ম পালন করতে পারে, তাদের শিকার করতে দেওয়াও বাস্তুতন্ত্রের জন্য দরকার।
বার্টন এবং তার সহকর্মীরা মতে মানুষ আগে যে সমস্ত প্রাণীকে বিশেষ লক্ষ করার সময় পেত না গৃহবন্দী অবস্থায় তাদের দেখতে পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে, তারা মহামারী চলাকালীন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কার্যকলাপে বিশ্বব্যপী বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখতে পাননি। তাদের গবেষণা নেচার ইকোলজি ও ইভোলিউশনে প্রকাশিত হয়েছে।