আমাদের শরীর গ্লুকোজ থেকে শক্তি গ্রহণ করে, কিন্তু গ্লুকোজের দুটো রূপ আছে, ডেক্সট্রো (ডি বা +) বা লেভো (এল বা -), যার মধ্যে আমরা ডেক্সট্রো গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারি। অণুর এই অবস্থাকে এনানশিওমার বলা হয়। এনানশিওমার হল পদার্থের এক জোড়া অণু যা দুটো আকারে বিদ্যমান, তারা একে অপরের মিরর ইমেজ কিন্তু একে অপরের উপর চাপানো যায় না। আমাদের দুহাতের মতোই, এই নির্দিষ্ট জৈব অণুগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত; ঠিক যেন একটা চিত্র আর তার প্রতিফলন– এই ঘটনাকে রসায়নবিদরা ক্যাইরালিটি বা হ্যান্ডেডনেস বলেন। এনানশিওমার দ্রবণে দ্রবীভূত হলে তখন আলোর নীচে তাদের দুটো রূপ দেখা যায়, ডেক্সট্রো (ডি বা +) বা লেভো (এল বা -), এই দু ধরনের অণু বিপরীতমুখী ঘোরে। একই অণুর দুটি মিরর ইমেজ, উভয় এনানশিওমার, প্রায়শই আলাদা আলাদা জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। ড্রাগের জন্য, অনেক সময় শুধুমাত্র এক ধরনের কাঠামো আবশ্যিক। রাসায়নিক সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রায়শই উভয় ফর্মের ১:১ মিশ্রণ তৈরি হয়। কিন্তু এই মিশ্রণগুলোর একটি নির্বাচিত ফর্মে রূপান্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদদের একটি দল এনানশিওমারের দুধরনের অণুর মিশ্রণ যা আয়না ও চিত্রের মতো থাকে, তাকে বহিরাগত শক্তি হিসেবে আলো ব্যবহার করে একক আকারে রূপান্তরিত করেছেন। অণুর এই এক গঠনে রূপান্তর ড্রাগ, ওষুধ প্রস্তুতিতে কাজে লাগে।
নেচার পত্রিকায় গবেষকরা জানিয়েছেন, তারা এমন এক অ্যালুমিনিয়াম কমপ্লেক্স নেন যা আলোর উপস্থিতিতে অনুঘটক হিসেবে সক্রিয়ভাবে কাজ করে অণুর মিশ্রণকে একটা একক আকারে রূপান্তরিত করে। এই প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলক এবং কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে করা হয়েছিল। তাই বিস্তারিত কম্পিউটার-ভিত্তিক বিশ্লেষণ এর অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করেছে। আলোক-মধ্যস্থ প্রতিক্রিয়ায় স্থানিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা সমসাময়িক জৈব রসায়নের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই জন্য সাধারণত দুটি স্বতন্ত্র অনুঘটক একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নেওয়া হয়: একটি ফটোক্যাটালিস্ট, যা অপর অনুঘটকের সাথে মিলিতভাবে কাজ করে প্রক্রিয়া শুরু করে, আর এই দ্বিতীয় অনুঘটক অণুর স্থানিক বিন্যাস নিয়ন্ত্রণ করে। এইক্ষেত্রে একটি অনুঘটকের কাঠামোতে উভয় ফাংশনের সফল ইন্টিগ্রেশন করা হয়েছিল। আর এই অনুঘটক অ্যালুমিনিয়াম নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল ফলে তা সহজলভ্য ও সস্তা। ভবিষ্যতে এটি ওষুধ শিল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে।