জলের মধ্যে নুন। এ আর কি অসাধারণ দ্রব্য। রসায়নের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও নুনজলের তাৎপর্য আর কতটুকুই বা! কিন্তু দ্রব্যটা যদি হয় নুনজলের বরফ, যা কিনা আবিষ্কৃত হয়েছে ভিনগ্রহে কিংবা সৌরজগতের অন্য কোনও দূর উপগ্রহে। তাহলে বিষয়টা কেবল কৌতূহলের নয়, বরং যুগান্তকারী।
নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইড আর জল – দুটো জিনিসই পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে মেলে। দুটো পদার্থ মেশালে নুনের অণুগুলো জলের মধ্যে মিশে গিয়ে একটা দ্রবণ তৈরি করে। সোডিয়াম ক্লোরাইডের উপস্থিতিতে ঐ দ্রবণের হিমাঙ্ক সাধারণ জলের তুলনায় কমে যায়। কিন্তু তাপমাত্রা আরও কমতে থাকলে শেষমেশ ঐ নুনজলের দ্রবণ হিমায়িত হয়। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাটা পৃথিবীতে ‘স্বাভাবিক’। আমাদের গ্রহের বাইরে যেখানে চাপ বেশি আর তাপমাত্রা কম, সেখানে কিন্তু একইভাবে ঘটনাটা ঘটে না। এই অবস্থায় নুনজলের বরফের মধ্যে নুনের চেয়ে জলের ভাগটা বেশি থাকে।
যেমন, বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ ইউরোপার উপরিতলে যে নুনজলের বরফ আছে তাতে জলের ভাগ বেশি। এর কারণ এতদিন অবধি বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। সোডিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রিত জল যে অন্য পরিস্থিতিতে অন্যরকম আচরণ করে সেই আবিষ্কারটাও এতদিন হয়নি।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ব্যাপটিস্ট জার্নাক্স বলছেন, ইদানীং বিজ্ঞানের জগতে এমন মৌলিক আবিষ্কার হয়নি বললেই চলে। উনি ব্যাখ্যা করলেন, সোডিয়াম ক্লোরাইড আর জল দুটোই কেমন সেটা আমরা জানি পৃথিবীতে বসে। কিন্তু আমাদের গ্রহের বাইরে রসায়নটা কেমন তা নিয়ে আমাদের জ্ঞান অন্ধকারের সমান। নতুন আবিষ্কারের বর্ণনা থেকে বোঝাই যাচ্ছে, পৃথিবীতে যেসব রাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় তা অন্য গ্রহেও আছে। কিন্তু সেগুলো হয়তো বৈশিষ্ট্যে পৃথক। মৌলিক খনিজবিদ্যার গবেষণা উনিশ শতকে যেমন হত এখন তেমনভাবে ভাবলে চলবে না। বরং পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে হবে উচ্চচাপে আর কম উষ্ণতায়।