গণিতবিদদের মতোই গণিত ব্যবহার করে নিজেদের বাসার সমস্যা সমাধান করেছে মৌমাছি। মৌমাছিরা তাদের বাসা বানায় মোম দিয়ে। ছটি বাহু বিশিষ্ট ছোটো ছোটো কুঠুরি পরপর পাশাপাশি সাজিয়ে তারা মৌচাক গঠন করে। এই ষড়ভুজাকৃতি কুঠুরির পাশে পাশে তারা মাঝে মাঝে পাঁচ বাহুবিশিষ্ট বা সাতটি বাহুবিশিষ্টি কুঠুরিও ঢুকিয়ে দেয়। আর এখানেই তারা জ্যামিতিকে ব্যবহার করে সুদক্ষ গণিতজ্ঞদের মতো।
কিছু ধরণের মৌমাছি এবং বোলতা কলোনিতে বাস করে। কলোনি বাড়ার সাথে সাথে এদের কখনও কখনও কুঠুরির আকার বাড়াতে হয়। কিন্তু উপকরণ নষ্ট না করে বিভিন্ন আকারের ষড়ভুজ একত্রে পাশাপাশি সাজানো কঠিন আর তাদের বাসা তৈরির উপাদান অর্থাৎ মোম তৈরি করাও খুব সোজা ব্যাপার নয়। মৌমাছি এবং বোলতা উভয়ই এই সমস্যার সমাধান করেছে; তারা পঞ্চভুজ এবং সপ্তভুজাকৃতি কুঠুরির জোড়া মাঝে মাঝে ষড়ভুজাকৃতি কুঠুরির মধ্যে সাজিয়ে দিয়েছে। মৌমাছি ও বোলতার মতো সামাজিক প্রাণীদের কলোনি শ্রমিক মৌমাছি দ্বারা পরিচালিত। রানি মৌমাছি ষড়ভুজ আকারের কুঠুরিতে ডিম পাড়ে। মৌমাছিরা মৌচাক তৈরি করে মোম দিয়ে আর বোলতা গাছের গা চেঁচে তা থেকে কাগজের মতো মণ্ড তৈরি করে তাদের বাসা বানায়। একটি মৌমাছির কলোনিতে সাধারণত তিন ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক মৌমাছি থাকে: কর্মী, পুরুষ এবং একটি রানি মৌমাছি। কয়েক হাজার শ্রমিক মৌমাছি বাসা তৈরি, খাদ্য সংগ্রহ এবং ছোটো মৌমাছিদের লালনপালনে সহযোগিতা করে। পুরুষ ও রানি মৌমাছিরা আকারে বড়ো তাই কুঠুরির আকারও বড়ো হওয়া প্রয়োজন। আর এই বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কীভাবে এই ধাঁধাটি তারা সমাধান করে তা অনুসন্ধান করতে, স্মিথ এবং অন্যান্য গবেষকরা ১১৫ টি ছবি বিশ্লেষণ করেছেন যার মধ্যে পাঁচটি প্রজাতির মৌমাছি আর চারটি প্রজাতির বোলতা অন্তর্গত। তারা দেখেন যে মৌমাছি এবং বোলতা উভয়ই বিজোড় বাহু বিশিষ্ট কুঠুরিগুলো জোড়ায় তৈরি করে অর্থাৎ পাশাপাশি দুটি কুঠুরির একটির পাঁচটি বাহু আর অপরটির সাতটি বাহু। এই জোড়া কুঠুরিগুলো কর্মী মৌমাছির ছোটো কুঠুরি আর পুরুষ এবং রানির বড়ো কুঠুরির মধ্যেকার ব্যবধান কমিয়ে দেয়। এক জোড়া ষড়ভুজের মতোই পাশাপাশি একটি পাঁচবাহু বিশিষ্ট ও একটি সাত বাহুবিশিষ্ট কুঠুরির জোড়ার সমান সংখ্যক খোলা বাহু থাকে যার থেকে আবার তারা দশটি ষড়ভুজ তৈরি করতে পারে। তাই প্যাটার্ন ব্যাহত হয় না। সাত-পার্শ্বযুক্ত কুঠুরির বৃহত্তর আকারের জন্য মৌমাছি এবং বোলতারা তার বড়ো বাহুর পাশে বড়ো ষড়ভুজ তৈরি করতে পারে। তারা সর্বদা প্রথমে পাঁচ-পার্শ্বযুক্ত ঘর তৈরি করে, এবং তারপরে সাত-পার্শ্বযুক্ত ঘর।আর এইভাবেই গণিতবিদদের মতো জ্যামিতি ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করে।