মাটির চারপাশের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য গাছের শিকড়ের নিজস্ব থার্মোমিটার রয়েছে আর তারা সেই অনুযায়ী তাদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে – এমনটাই বলছেন এক দল গবেষক। মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটি হ্যালে-উইটেনবার্গ (MLU) এর নেতৃত্বে গবেষকরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখিয়েছেন মূলের তার নিজস্ব তাপমাত্রার অনুভূতি রয়েছে এবং প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থাও রয়েছে। ইএমবিও জার্নালে এক নতুন গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে শিকড় নিজেরাই তাপমাত্রা চিহ্নিত করে এবং উচ্চ তাপমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখায়। গবেষকদের মতে ভবিষ্যতে উদ্ভিদ প্রজননের জন্য এই গবেষণা কার্যকারী হতে পারে।
গবেষকরা ক্লাইমেট চেম্বার ব্যবহার করে দেখার চেষ্টা করেন কীভাবে সর্ষে প্রজাতির একটি গাছ এবং দুটি ফসল, বাঁধাকপি এবং টমেটো ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রায় (২০ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) প্রতিক্রিয়া দেখায়। ইনস্টিটিউট অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড নিউট্রিশানাল সায়েন্সের অধ্যাপক মার্সেল কুইন্টের মতে এখনো পর্যন্ত, এটি ধরে নেওয়া হয়েছিল যে উদ্ভিদের কাণ্ড পুরো উদ্ভিদের প্রক্রিয়াটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ট্রান্সমিটারের মতো মূলকে সংকেত পাঠায় যে মূলের এবার বৃদ্ধি পরিবর্তন করা উচিত। গবেষকের দল, লিবনিজ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যান্ট বায়োকেমিস্ট্রি (আইপিবি), ইটিএইচ জুরিখ এবং কোলনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর প্লান্ট ব্রিডিং রিসার্চে করা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে এই ধারণাকে অস্বীকার করতে সক্ষম হয়েছে। একটি পরীক্ষায়, বিজ্ঞানীরা গাছের কাণ্ড কেটে বাদ দিয়ে শুধু শিকড়কে বাড়তে দেন। তারা দেখেন যে শিকড়ের বৃদ্ধিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি এবং সেই শিকড়, কাণ্ড যুক্ত উদ্ভিদের মতোই উচ্চ তাপমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা কোশ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে এবং শিকড় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে মূলের কোশগুলো গ্রোথ হরমোন অক্সিনের উত্পাদন বাড়িয়েছে, যা পরে মূলের ডগাতে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে, এটি কোশ বিভাজনকে উদ্দীপিত করে এবং শিকড়কে মাটির আরও নীচে পৌঁছাতে সক্ষম করে। যেহেতু তাপ বাড়লে খরা হয়, তাই মূলের মাটির স্তরের আরো গভীরে যাওয়া প্রয়োজন হয়ে পরে যেখানে সেটি শীতলতা ও জল পায়। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রজননের জন্য শিকড়ের বৃদ্ধি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাপমাত্রা-নির্ভর শিকড় বৃদ্ধির আণবিক ভিত্তি বোঝা তাই বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।