অ্যালার্জি তখনই ঘটে যখন মানুষের ইমিউন সিস্টেম কোনো অ্যালার্জেনের প্রতি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া শুরু করে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ হল, চোখ দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, সর্দি, বমি এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, অ্যানাফিল্যাক্সিস, যাতে গলা জিব ফুলে যায় দমবন্ধ লাগে, মানুষ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। হাঁপানির চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত একটা ওষুধ মানুষকে মারাত্মক বিপজ্জনক খাদ্য অ্যালার্জি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে বলে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশস ডিজিজ-এর সহায়তায় করা গবেষণায়, চিনাবাদাম এবং তার সাথে আরও অন্তত একটা খাবার যেমন দুধ বা ডিমে অ্যালার্জি আছে এমন ১১৮ জন শিশুদের ওপর জোলেয়ার (Xolair), যার রাসায়নিক নাম ওমালিজুমাব তা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমেরিকার দশটা মেডিক্যাল সেন্টারে করা এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৯ জন শিশুকে ওষুধ দেওয়ার পর ৬৭% শিশু চিনাবাদামের প্রোটিন স্বল্প পরিমাণে হলেও গ্রহণ করতে পারছে আর তাতে তাদের অ্যালার্জির লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছেনা। বাকি ৫৯ জন শিশুদের প্ল্যাসিবো দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে মাত্র ৭ শতাংশের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি প্রকাশ পায়নি।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এই মাসে প্রাপ্তবয়স্কদের এবং শিশুদের মধ্যে খাদ্য অ্যালার্জির জন্য এই ওষুধের ব্যবহার অনুমোদন করেছে। অ্যালার্জি জনিত হাঁপানির ক্ষেত্রে এই ওষুধ ২০ বছরেরও বেশি অনুমোদিত। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, যদিও এই ওষুধ অ্যালার্জির বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া কমিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে অ্যালার্জি-প্রবণ ব্যক্তিরা তাদের যে খাবারে অ্যালার্জি আছে, তা তারা যত খুশি খেতে পারেন, বরং তাদের পরিচিত অ্যালার্জেন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা দরকার। জোলেয়ার প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহে ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়। বারবার ইনজেকশন নেওয়া কষ্টকর হলেও, যারা ক্রমাগত ভয়ে ভয়ে থাকেন, যে নিজের অজান্তে কোনো অ্যালার্জেন একটু গ্রহণ করলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে, বা আরও বড়ো বিপদ আসতে পারে, তাদের জন্য এই ওষুধ স্বস্তিদায়ক। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা জানিয়েছেন, এইসব রোগীদের ক্ষেত্রে এই চিকিত্সা “জীবন পরিবর্তনকারী” হতে পারে। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে আনুমানিক ৩০০০০ গুরুতর অ্যালার্জির কেস আসে। সেক্ষেত্রে এই ওষুধ ব্যবহার অ্যালার্জি চিকিৎসায় বড়ো সহায়ক হবে।