দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা জানেন আচরণ গঠনে জিনগত কারণ এবং পরিবেশগত প্রভাবের মধ্যে একটা জটিল সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে মস্তিষ্কে জিন নিয়ন্ত্রণকারী আচরণ নমনীয় এবং প্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল নিয়ন্ত্রিত নেটওয়ার্কের মধ্যে কাজ করে। প্রচলিত জিনোম-ওয়াইড অ্যাসোসিয়েশন স্টাডিজ (GWAS) প্রায়শই এই জটিলতাকে উপেক্ষা করে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে পরিবেশগত পরিবর্তনশীলতা নিয়ন্ত্রণ বেশ চ্যালেঞ্জিং। আমেরিকার ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় আরবানা-চ্যাম্পেইন এবং রুটগার্স ইউনিভার্সিটির গবেষকরা PLOS বায়োলজিতে জানিয়েছেন, জেনেটিক গবেষণায় পরিবেশগত প্রভাবের গুরুত্ব অবহেলা করা হয়েছে। লেখকরা জানিয়েছেন, এর ফলে জিন সবকিছুর নির্ধারক সেই চিন্তাভাবনা স্থায়ী হয়ে যায়।
গবেষকরা জিনগত অধ্যয়নের সাথে পরিবেশগত তথ্য একত্র করে দেখতে বলেছেন, যেমন ফলের মাছির ক্ষেত্রে পরিবেশের সাপেক্ষে তাদের আগ্রাসন দেখা হয়। একইভাবে এই সম্পর্কের ভিত্তিতে অন্যান্য প্রাণী ও মানুষের আচরণ দেখা দরকার। প্রাণীর ওপর পরীক্ষা থেকে প্রকাশ পায় কীভাবে জিনোটাইপ এবং পরিবেশ উভয়ই মস্তিষ্কের জিন নিয়ন্ত্রক নেটওয়ার্ক এবং পরবর্তী আচরণকে আকৃতি দেয়। জিনোমিক প্রযুক্তির অগ্রগতি চিত্রিত করে কীভাবে পরিবেশের পরিবর্তনগুলো কেবল আচরণেই নয়, জিনের অভিব্যক্তিতেও পরিবর্তন ঘটায়, অর্থাৎ শুধুমাত্র বংশগতির দ্বারা আচরণ নির্ধারিত হয় না। গবেষকদের মতে একই জিনগুলো তাদের অভিব্যক্তির উপর নির্ভর করে ব্যক্তিদের মধ্যে আলাদাভাবে কাজ করতে পারে।
লেখকরা প্রাণী এবং মানবের আচরণের উৎস বোঝার জন্য বহু-বিভাগের একত্রীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। রিনা ব্লিস, রুটগারের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক বলেছেন মানুষের আচরণের ক্ষেত্রে জিন ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়াগুলোর জটিলতা বোঝার জন্য সমাজ বিজ্ঞানী এবং জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজন। গবেষণায় আধুনিক উদীয়মান প্রযুক্তি যেমন মস্তিষ্কের অর্গানয়েডস এবং মস্তিষ্কের ইমেজিংয়ের নতুন রূপ আচরণের ওপর জেনেটিক এবং পরিবেশগত প্রভাবকে সংযুক্ত করার আণবিক প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। জিন-পরিবেশগত মিথস্ক্রিয়াগুলো বুঝলে তা মানুষের সামাজিক এবং আচরণগত জিনোমিক্স বোঝার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে। আচরণের মূল কারণ অধ্যয়ন করলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্বাস্থ্য এবং রোগ সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব হবে। তাদের আশা একটা সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আন্তঃবিষয়ক সহযোগিতা গবেষকদের মানব আচরণের জটিলতাগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে, যাতে জেনেটিক্স মানব আচরণের মূল নির্ধারক সেই চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন আসে।