মানুষ দীর্ঘকাল ধরে পাখির গান, তার শিস, কলকাকলিতে মুগ্ধ। সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী হলে কোকিলকণ্ঠী, বুলবুলি পাখির মতো সুরেলা এসব তকমাও মানুষকে দেওয়া হয়ে থাকে। মানুষের খুশি হওয়ার কথা যে পাখিদের স্বরযন্ত্র ও মানুষের স্বরযন্ত্রের জেনেটিক উৎস এক। পাখিদের ডাকের জন্য দায়ী স্বরযন্ত্র হল সিরিংস, যা পাখির প্রজাতিভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে আর এর বিবর্তনীয় উত্স সম্পর্কে এতদিন খুব কম জানা ছিল। এ নিয়ে অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক এক গবেষণা হয়েছে। এই অধ্যয়নে বিশ্বের সবচেয়ে ছোটো পাখি হামিংবার্ড এবং বৃহত্তম পাখি, উটপাখির সিরিংসের উচ্চ-রেজোলিউশন শারীরবৃত্তীয় স্ক্যান করে আবিষ্কার করা গেছে যে পাখিদের সিরিংস এবং সরীসৃপ, মানুষ সহ স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্বরযন্ত্র, ল্যারিংস, প্রাণীদের শরীরে একই বিকাশমূলক প্রোগ্রামিং-এর অংশ। এটা হোমোলজি বা সমসংস্থ অঙ্গের এক উদাহরণ। এর অর্থ হল বিভিন্ন ধরনের কলা বা অঙ্গ একই জেনেটিক সূত্র থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই গবেষণার সূত্রপাত হয়েছিল, যখন অ্যান্টার্কটিকায় হাঁসের মতো এক ধরনের পাখির সিরিংস পাওয়া গিয়েছিল, যা এখনও পর্যন্ত পাওয়া পাখির সবচেয়ে প্রাচীন স্বরযন্ত্র সিরিংসের উদাহরণ।
কারেন্ট বায়োলজিতে প্রকাশিত গবেষণায় বিশদে বলা হয়েছে যে কীভাবে বিজ্ঞানীরা ল্যারিংস ও সিরিংস টিস্যুর মধ্যে গভীর সংযোগ আবিষ্কার করেছেন। গবেষণায় জানানো হয়েছে একই জিনগুলো ইঁদুর এবং মুরগির ভ্রূণে স্বরযন্ত্রের বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করছে, যদিও এই অঙ্গগুলো বিভিন্ন ভ্রূণীয় স্তর থেকে উদ্ভূত হয়। পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীদের স্বরযন্ত্র একই জেনেটিক পথে গঠিত হয়, দেখা যায় তাদের ভোকাল টিস্যুর সেলুলার গঠন ও কম্পনশীল বৈশিষ্ট্য একই রকম। গবেষণায় ১৪ টা বিভিন্ন পাখির প্রজাতির সিরিংসের বিকাশও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষকরা মনে করছেন আধুনিক পাখিদের সাধারণ পূর্বপুরুষদের মধ্যে সিরিংসে দুধরনের শব্দের উৎসারিত হত, বা দুটো স্বতন্ত্র ভোকাল ফোল্ড ছিল। এই বৈশিষ্ট্য বর্তমানে সং বার্ডদের মধ্যে দেখা যায়, যা একই সময়ে দুটো স্বতন্ত্র শব্দ তৈরি করতে দেয়। গবেষণায় বলা হয়েছে পাখিদের সাধারণ পূর্বপুরুষরা বিভিন্ন ধরনের ডাক দিতে পারত। তবে পাখিদের পূর্বপুরুষ ডাইনোসরদের সিরিংস ছিল কিনা- গবেষকরা তা এখনও জানেন না। ডাইনোসরের কোনো ফসিলে এখনও সিরিংস আবিষ্কৃত হয়নি।