১৮৬০ সালে চার্লস ডারউইন প্রথম ইংল্যান্ডের অনুর্বর অঞ্চলে ঝোপঝাড়ের মধ্যে সূর্যশিশির (Drosera rotundifolia) গাছের পাতায় এক গুচ্ছ পোকা মাকড় আটকে থাকতে দেখেন। সেখান থেকেই তিনি এটা বলা শুরু করেন যে কোনো কোনো গাছ-পালা প্রাণীভুক হয়। এই গাছ প্রাণীর এনজাইম গলিয়ে, বেঁচে থাকার জন্য সেখান থেকে পরিপোষক পদার্থ সংগ্রহ করে।
সেই সময়ে ডারউইনের স্ত্রীও তার স্বামীর এই আবিষ্কার বিশেষ বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু বর্তমানে বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে মাংশাসী গাছের অস্তিত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এই গাছের কীভাবে বিবর্তন ঘটেছে, যাতে তারা বেশ বড়ো শিকার উভচর, ছোটো স্তন্যপায়ী প্রাণী আকর্ষণ করে, তাকে ধরতে পারে, হজম করতে পারে তা এখনও বোঝা যায় নি।
বর্তমানে মাংশাসী গাছ নানা আকারের, নানা মাপের হতে পারে। যেমন কর্কস্ক্রুতে ভিতরের দিকে ঝুঁকে পড়া রোমে পতঙ্গ বসলে, তা পতঙ্গকে ভিতরের দিকে ঠেলে দেয়। কলসপত্রী গাছে পোকা বসলে তার ঢাকনা খুলে, ভিতরের তরলে পতঙ্গ পড়ে যায়, যা পতঙ্গকে গলিয়ে তার প্রোটিন শোষণ করে। সূর্যশিশিরে আঠালো অংশ পোকা ধরতে সাহায্য করে, ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপের পাতার শেষে দুটো খণ্ড আছে, যার ভিতরের দিকে ট্রাইকোম বা চুলের মতো সোঁয়া থাকে। এখানে শিকার এসে বসলে, পাতা দুটো বন্ধ হয়ে শিকার ধরে নেয়।
সম্প্রতি গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে, ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপের ‘স্ন্যাপ ট্র্যাপ’ -এর বিবর্তন ‘তিন থেকে চার প্রজন্ম ধরে ফ্লাই ট্র্যাপ’ থেকে হয়েছে।
বিভিন্ন সময় ২০১৭, ২০১৮ সালে এ নিয়ে নানা গবেষণায় বলা হয়েছে সপুষ্পক উদ্ভিদের মধ্যে এই পতঙ্গভুক উদ্ভিদের বার দশেক বিবর্তন ঘটেছে। বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টর অ্যালবার্ট জানিয়েছেন এদের বিবর্তন বা মাংশাসী হওয়ার পিছনে মূল কারণ হল এরা অম্লযুক্ত ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে মাটি, যেখানে পুষ্টির অভাব থাকে সেখানে জন্মায়। এই পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য এরা পোকা মাকড় ধরে খায়। একটা মাঝারি মাপের পোকা ভেনাস ফ্ল্যাই ট্র্যাপকে এক সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় ফসফরাস ও নাইট্রোজেন যোগান দিতে পারে।
ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তারা জ্যাসমোনেট রাসায়নিক পদার্থ অন্য উদ্ভিদের মতো ব্যবহার করে। অন্য উদ্ভিদ পারিপার্শ্বিক চাপ হ্রাসের জন্য এই রাসায়নিক ব্যবহার করে, যেমন ঠান্ডা, লবণের পরিমাণ, জলের ঘাটতি, ভারী মৌলের উপস্থিতি এইসব প্রভাবক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। কিন্তু ভেনাস ফ্লাই ট্র্যাপ এই রাসায়নিক ব্যবহার করে তারা শিকারকে ভেঙে ফেলে তার থেকে পুষ্টি নিজের শরীরে চালনা করে। কিন্তু বিভিন্ন মাংশাসী উদ্ভিদের জেনেটিক বিবর্তন এখনও জানা যায়নি।
গবেষকদের মতে, এ নিয়ে অচিরে আরো গবেষণা প্রয়োজন বিশেষত মাংশাসী উদ্ভিদের প্রায় এক চতুর্থাংশ যেখানে অবলুপ্ত হতে বসেছে, তাদের সম্বন্ধে জানা বোঝা এখনই প্রয়োজনীয়।