মহাকাশে ড্রপলেট বা ফোঁটা গঠিত হয় কীভাবে? বিজ্ঞানীরা এই জটিল প্রক্রিয়া আজও সম্পূর্ণরূপে বুঝে উঠতে পারেনি। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ESA) এই ফোঁটার গঠন বোঝার জন্য, ড্রপকোল নামে একটি যুগান্তকারী গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছে। প্রকল্প, ড্রপ কোলেসেন্সের লক্ষ্য হল কীভাবে ড্রপলেটগুলো মহাকাশ এবং পৃথিবী উভয় জায়গায় তৈরি হয় তা বোঝা। ড্রপলেটের গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি, বিশেষত যে স্থানে কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। পৃথিবীতে এই মাধ্যাকর্ষণ ড্রপলেটের আকার তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন কোনো তরল ওপর থেকে নীচে পড়ে বা ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ে, তখন মাধ্যাকর্ষণ সেই ফোঁটাটিকে নীচের দিকে টেনে নেয়, যার ফলে ফোঁটাটি পড়ার সাথে সাথে লম্বা বা চ্যাপ্টা হয়ে যায়। কিন্তু মহাকাশে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ কার্যত অস্তিত্বহীন, ফোঁটাগুলো ভিন্নভাবে আচরণ করে। এই গবেষণার সুবিধার্থে, ড্রপকোল সিস্টেম নামে পরিচিত একটি হার্ডওয়্যার ডিভাইস ESA এর পক্ষ থেকে রোমানিয়ান ইনস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। যেখানে কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই সেখানে এই ডিভাইস দিয়ে পরীক্ষা চালানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহারের আগে, ২০২২ সালের অক্টোবরে ESA-এর ৭৯-তম প্যারাবোলিক ফ্লাইটের সময়, ডিভাইসটি খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়েছিল। রোমানিয়া, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে ডিভাইসটির নির্মাণ এবং কার্যকারিতা পরীক্ষা করেন। প্যারাবোলিক ফ্লাইটের সময় এয়ার বাস ৩১০ জিরো গ্র্যাভিটি বিমানে ড্রপকোল ডিভাইস পরীক্ষা করা হয়েছিল। একটি জার্মান এরোস্পেস সেন্টার ডিএলআর আর একটি পরীক্ষায়ও করেছিল- কীভাবে দুটি ফোঁটা একে অপরের কাছে আসে এবং একত্রিত হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে কী হয়। দুটি পরীক্ষাই বিমানের পরীক্ষামূলক র্যাকের মধ্যে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়েছিল। ড্রপকোল প্রকল্পের ফলাফল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা এবং মেঘ গঠন, জ্বালানী জ্বলন এবং কোনো উপকরণের মধ্যে সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে ধারণা গঠন করতে সাহায্য করবে। তাছাড়াও দীর্ঘ সময়কালীন কোনো মহাকাশ মিশনে মহাকাশচারীদের ওষুধ প্রদান করার ক্ষেত্রেও ড্রপলেটের বিজ্ঞান বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্যারাবোলিক ফ্লাইটের সফলতার পরে, ২০২৪ সালে ESA মিশনের অংশ হিসাবে ড্রপকোল পরীক্ষা ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে (ISS) চালানোর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এটি শূন্য মাধ্যাকর্ষণে কীভাবে ড্রপলেট গঠিত হয় তা অনুসন্ধান করবে, দুটি ড্রপ মুখোমুখি হলে কীভাবে তাদের একত্রিতকরণ হয় তা একটি হাই-স্পিড ক্যামেরার মাধ্যমে একটি অপটিক্যাল যন্ত্র ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ISS-এর সমস্ত ড্রপকোল পরীক্ষা পৃথিবী থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে আর এই ধরনের মৌলিক প্রক্রিয়া বোঝা আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করতে সাহায্য করবে।