মহাকাশে যাওয়া মানবদেহের পক্ষে বেশ ক্ষতিকারক। আমরা কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর পরিবেশে বিবর্তিত হয়েছি,তাই পৃথিবীর পরিবেশ থেকে সরে গেলে শরীর একটু একটু করে সমস্যার মুখোমুখি হতে শুরু করে। হাড় এবং পেশীর ঘনত্ব কমে যায়, মস্তিষ্কে অত্যধিক তরল থেকে দৃষ্টি সমস্যা তৈরি হয়; মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় শারীরিক আর্দ্রতা শরীরের ভিতরে যত্র তত্র ভেসে বেড়াতে থাকে। প্রস্রাবের সমস্যা তৈরি হয়, কখন প্রস্রাব করতে হবে তা বোঝার জন্য মাধ্যাকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পেসফ্লাইটের থেকে, একটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি (ইভিএ), যা স্পেসওয়াক হিসাবে পরিচিত, তা করার পরে অনেক নভোচারীদের নখ পড়ে যায়। এর প্রযুক্তিগত শব্দটি হল অনাইকোলাইসিস এবং এই সমস্যাটি মহাকর্ষের চেয়ে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সাথে আরও অনেক বেশি জড়িত বলে মনে হয়।
ইভিএ পারফর্ম করার সময় যতটা সম্ভব নিরাপদ থাকার জন্য, একজন মহাকাশচারীকে চাপযুক্ত স্পেস স্যুট পরতে হয়। কিন্তু হাতে এটি সমস্যা সৃষ্টি করে। ২০১৫ সালের কনফারেন্স পেপারে জ্যাকলিন চার্ভাতের নেতৃত্বে একটি দল বলেছিলেন, যারা মহাকাশচারীদের এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি (ইভিএ) এর জন্য প্রশিক্ষণ দেয় তাদের হাতে আঘাত থাকা এক সাধারণ বিষয়। যখন গ্লাভসে চাপ দেওয়া হয়, তখন তারা আঙুলের চলাচল সীমিত করে এবং কাজের সময় চাপের পয়েন্ট তৈরি করে, তাতে ব্যথা, পেশীর ক্লান্তি, ঘর্ষণ এবং মাঝে মাঝে আরও গুরুতর আঘাত যেমন অনাইকোলাইসিস হয়। ইভিএ স্পেসস্যুটে দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হতে পারে, এর দীর্ঘতম রেকর্ড হল ৮ ঘন্টা এবং ৫৬ মিনিট। দীর্ঘ সময় গ্লাভস পরা হাতের আঘাতের কারণ হতে পারে বা তা বাড়িয়ে তুলতে পারে।বিশেষ করে স্পেস স্টেশনের বাইরে ম্যানুয়াল কাজগুলি সম্পাদন করার জন্য হাত দুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যাটি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। চার্ভাত এবং তার দল যেমন উল্লেখ করেছে, গ্লাভসের নকশা যাই হোক না কেন এটি ঘটে, এবং সমস্যাটির ঠিক কী কারণ তা খুঁজে বের করা বেশ কঠিন।
২০১০ সালে, গবেষকদের একটি দল মহাকাশচারীদের ২৩২টি হাতের আঘাতের রিপোর্ট অধ্যয়ন করে দেখেন মহাকাশচারীদের মেটাকার্পোফালাঞ্জিয়াল জয়েন্ট যেখানে হাতের তালু এবং আঙ্গুলগুলি মিলিত হয়, তার প্রস্থ এবং পরিধির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে এবং সেখানে আঘাতের ঝুঁকি সর্বাধিক। তাদের গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে স্পেসস্যুট গ্লাভস এই অঞ্চলের গতিশীলতাকে সীমিত করে, যা আঙ্গুলের উপর বেশি চাপ দেয়, যার ফলে রক্ত প্রবাহ কমে যায়, টিস্যুর ক্ষতি হয় এবং অনিকোলাইসিস হয়।
অনিকোলাইসিসের সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণ কমানোর জন্য ক্রিস্টোফার রিডের নেতৃত্বে একটি দল মহাকাশচারীদের মধ্যে অনিকোলাইসিস আঘাতের অধ্যয়ন করেছিল। এই বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত, তাদের গবেষণায় ৩১ টি অনিকোলাইসিস ইনজুরি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে গ্লাভসের নকশাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের গবেষণায় দুটি গ্লাভসের ধরনের মধ্যে, একটিতে আঙ্গুলের নখের ক্ষতির ঝুঁকির সম্ভাবনা ৮.৫ গুণ বেশি ছিল। বেশিরভাগ আঘাতই মধ্যমা আঙুলে হয়ে থাকে; গ্লাভসের সাইজ এবং মধ্যম আঙুলের দৈর্ঘ্যও এক্ষেত্রে দায়ী, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে অনিকোলাইসিস আঘাতের সম্ভাবনা বেশি বলে মনে হয়। তবে এর একটি সমাধান আসতে পারে, কারণ নতুন আর্টেমিস স্পেসসুট আসার সম্ভাবনা আছে, যা হয়তো এই সমস্যার সমাধান করবে।