১৯৫৭ সালে স্পুটনিক 1 উৎক্ষেপণের পর থেকে আমরা মহাকাশে নানা ধ্বংসাবশেষ জড়ো করে চলেছি, মহাকাশ স্টেশন এবং বড় যোগাযোগ উপগ্রহ বা ছোট কিউবস্যাট পর্যন্ত সবকিছু থেকেই ধ্বংসাবশেষ যোগ হতে থাকে। প্রতিটি উৎক্ষেপণের ফলে, অরবিটাল পাইলে রকেটের যন্ত্রাংশ এবং পেইন্ট চিপগুলির মতো জিনিস যোগ হয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে এক মিলিয়নেরও বেশি বস্তু, যাদের মধ্যে কিছু এক সেন্টিমিটারের চেয়েও চওড়া এবং কমপক্ষে ১৩০ মিলিয়ন মিলিমিটার আকারের বস্তু পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের খুব তাড়াতাড়ি সরানো সম্ভব নয়।
কক্ষপথগুলি এখন এতটাই বিশৃঙ্খল যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এবং অন্যান্য ক্রু মিশনগুলিকে সংঘর্ষ এড়াতে সময়ে সময়ে কক্ষপথ পরিবর্তন করতে হয়। ধ্বংসাবশেষে বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট রয়েছে, যার থেকে আরও ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়। যদি আমরা আমাদের বর্তমান উৎক্ষেপণ প্রকল্পগুলি অনুসরণ করি, তাহলে এমন একটি সময় আসবে যখন সংঘর্ষগুলি সাধারণ হয়ে যাবে, যা কেসলার ক্যাসকেড নামে পরিচিত। কেসলার ক্যাসকেড হল মহাকাশ দূষণের ফলে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে বস্তুর ঘনত্ব যথেষ্ট পরিমাণে বেড়ে যাওয়া, ফলে বস্তুগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে একটি ক্যাসকেড সৃষ্টি হতে পারে যেখানে প্রতিটি সংঘর্ষ মহাকাশে আরও ধ্বংসাবশেষ তৈরি করে, আবার তার থেকে আরও সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু এর ফলাফল বিশ্ব উষ্ণায়নের মতোই ক্রমশ বাড়তে থাকবে আর চরম আকার নেবে।
এই সমস্যা সমাধান করার জন্য বেশ কয়েকটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং ক্লিয়ারস্পেস নামক একটি সুইস স্টার্টআপের মধ্যে সংযুক্তি। এয় প্রকল্পে বড়ো এবং বিপজ্জনক ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে সেটা কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। ছোটো ধ্বংসাবশেষ সরানো আরও সমস্যাজনক কিন্তু বড় অংশগুলি সরিয়ে ফেলতে পারলেও বলা যায় বেশ ভালো কাজ। বর্তমানে, ESA একটি পাইলট মিশন হিসাবে ২০২৬ সালে একটা ক্লিয়ারস্পেস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করেছে। যার লক্ষ্য হবে ভেগা সেকেন্ডারি পেলোড অ্যাডাপ্টার (ভেসপা) উপরের-পর্যায়ের উপাদানটি অপসারণ করা, যা ২০১৩ সালে একটা উৎক্ষেপণের অংশ ছিল। এটার ভর প্রায় ১০০ কিলোগ্রাম এবং লম্বায় প্রায় ২ মিটার । এই বড়ো অংশগুলো সরালেও কক্ষপথ আসতে আসতে কিছুটা আবর্জনামুক্ত হবে।