মহাকাশ ভ্রমণে যারা যান তাদের স্বাস্থ্যের উপর কেমন প্রভাব পড়ে? বিশ্বজুড়ে ১০০ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা তথ্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে মহাকাশে পৌঁছানোর পরে মানবদেহ বিভিন্নরকমের প্রভাব পড়ে – তবে বেশিরভাগ প্রভাবই পৃথিবীতে ফিরে আসার কয়েক মাসের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। মহাকাশে থাকাকালীন মহাকাশচারীদের দেহ প্রভূত পরিমাণে চাপের সম্মুখীন হয়, সে বিকিরণের কারণেই হোক বা ওজনহীনতার বিভ্রান্তিকর প্রভাবের জন্যই হোক। স্পেস হেলথ রিসার্চ অনুযায়ী দীর্ঘ দিন মহাকাশযাত্রা শরীরের প্রায় প্রতিটি তন্ত্র, শরীরের কার্ডিয়োভাসকুলার এবং মেটাবলিক সিস্টেম থেকে শুরু করে ইমিউন সিস্টেমের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকদিনের জন্য মহাকাশ মিশনে গেলে মহাকাশচারীরা সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মুখোমুখি হয়, তা হল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া। গবেষকরা দেখেছেন মানুষ যখন মহাকাশে থাকে, তখন তাদের রক্ত, হার্ট, ত্বক, প্রোটিন, কিডনি, জিন, মাইটোকন্ড্রিয়া, টেলোমেরেস, সাইটোকাইনস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সূচকে পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার প্রায় ৯৫ শতাংশ তিন মাসের মধ্যে তাদের আগের স্তরে ফিরে এসেছে। যদিও মহাকাশ ভ্রমণে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৭০০-রও কম, তাই গবেষকদের হাতে সেই সংখ্যক পরীক্ষার্থী নেই। তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মহাকাশচারীরা মহাকাশে অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হন। বেশিরভাগ সময় সেই ভাইরাস তারা পৃথিবী থেকে নিজেদের শরীরে করে নিয়ে যান। ভাইরাল সংক্রমণ হলে আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি তার মোকাবিলা করে, এবং ধীরে ধীরে আমরা সুস্থ হয়ে উঠি। শরীরে ভিতর সেই সব ভাইরাস অনেক দিন ধরে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু মহাকাশে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে সেই ভাইরাসগুলো আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। গবেষণা জানাচ্ছে পৃথিবীতে ফিরে আসার কয়েক মাসের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ শক্তি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সংক্রমণ কমতে শুরু করে। ওয়েইল কর্নেল মেডিসিনের প্রধান গবেষক বলেছেন, প্রধান বার্তাটি হল যে মহাকাশ ভ্রমণের পর বেশিরভাগ মহাকাশচারীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।