খিদে পেলে আমরা খাই, অনেকে আবার বলে থাকেন তারা মোটেও খিদে সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু মানুষ যে ক্ষুধা অনুভব করে আর সেই অনুযায়ী খাবার খায়, বা কতটা খাবে তা স্থির করে তার মস্তিষ্ক। গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্যের জন্য এই তাড়না প্রাণীর সিদ্ধান্ত এবং আচরণকে চালিত করে। বেশিরভাগ প্রাণীর ক্ষেত্রে ক্ষুধার জন্য নানা আচরণ মস্তিষ্কে উদ্ভূত হয়। তারপর আমাদের বাহ্যিক স্নায়ুতন্ত্র আমাদের মস্তিষ্ককে জানায় আমরা পর্যাপ্ত খাবার খেয়েছি কিনা। কিন্তু খুব সরল দেহের প্রাণীরাও কি এইভাবে ক্ষুধা অনুভব করে, কারণ তাদের শরীরে মস্তিষ্ক, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র অনুপস্থিত। সব প্রাণীর মস্তিষ্ক থাকে না, তাই ইউনিভার্সিটি অফ কিয়েলের প্রাণীবিদ ক্রিস্টোফ গিজ এবং সহকর্মীরা মিষ্টিজলে পাওয়া হাইড্রাকে পরীক্ষা করে দেখেন যে কীভাবে মস্তিষ্কহীন প্রাণীরা ক্ষুধার্ত বোধ করা আর খেয়ে পেট ভরে গেছে এই জৈবিক আচরণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে।
তারা দেখেছেন যে হাইড্রায় নিউরনের অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক রয়েছে। মস্তিষ্ক না থাকলেও, হাইড্রার একটা স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে, যার একটা নেটওয়ার্ক আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মতো কাজ করে। আমাদের মস্তিষ্ক আর আমাদের পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমের মধ্যে আমাদের মস্তিষ্কের বাইরের আর মেরুদণ্ডের সমস্ত স্নায়ু, এমনকি অন্ত্রের স্নায়ু অন্তর্ভুক্ত থাকে। হাইড্রায়, হজমের জন্য দায়ী স্নায়ুর নেটওয়ার্ক (এন৪) আভ্যন্তরীণভাবে অবস্থিত, আর খাওয়ার পর্যাপ্ত অনুভূতির জন্য স্নায়ুর অন্য নেটওয়ার্ক (এন৩) বাহ্যিকভাবে অবস্থিত। তবে এই দুটো সিস্টেম আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের মতো শরীরের সম্পূর্ণ আলাদা অংশে বিভক্ত নয়।
কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গিজ এবং তার দল দেখান হাইড্রা পেট পূর্ণ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি অনুযায়ী তাদের আচরণ শনাক্ত করতে এবং পরিবর্তন করতে পারে। যেমন হাইড্রাদের খাওয়ানোর পরে দেখা গেছে, তাদের আলোর উদ্দীপনার প্রতি উল্লেখযোগ্যভাবে আকর্ষণ কমে আর স্বাভাবিক নড়াচড়াও কমে। তাদের মতে একটা সম্ভাবনা হল হাইড্রা খাবারের সন্ধানে আলোর দিকে ডিগবাজি খাওয়ার মতো চলতে থাকে। খেয়ে তৃপ্তির অনুভূতি এই আচরণকে বাধা দেয়, কারণ এই প্রাণীদের সাময়িকভাবে খাবারের সন্ধান করতে হয় না। হাইড্রার স্নায়ুতন্ত্রগুলো স্বচ্ছ প্রাণীর ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, এই পৃথক যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলো প্রাণীর বিবর্তনের প্রথম দিকে উদ্ভব হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন হাইড্রার দুটো সিস্টেমের মধ্যে যোগাযোগ রাসায়নিকভাবে ঘটে। তাদের এই গবেষণা সেল রিপোর্টস-এ প্রকাশিত হয়েছে।