মাংসখেকো বুরুলি আলসার, বেয়ারনসডেল আলসার নামেও পরিচিত, মাইকোব্যাকটেরিয়াম আলসারান ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ত্বকের এক ধরনের সংক্রমণ। ছোটো মশার কামড়ের মতো শুরু হয়ে মাস কয়েক পরে ধীরে ধীরে ঘায়ে পরিণত হয়, যার ফলে আভ্যন্তরীন কলা ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। শুরুর দিকে ব্যথা না থাকলেও পরবর্তীতে ঠিক চিকিৎসার অভাবে ঘা গুরুতর হতে পারে। এজন্য এই ঘা “মাংসখেকো” নামে পরিচিত। নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের ছয় থেকে আট সপ্তাহের চিকিৎসায় সারে, কখনও কখনও সংক্রামিত কোশ কলা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দিতে হয়।
প্রতি বছর, ভিক্টোরিয়ানদের মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি বুরুলি আলসারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে এই রোগ কীভাবে ছড়ায় তা বিশেষ স্পষ্ট ছিল না। নতুন গবেষণায় জানা যাচ্ছে মশারা পসাম নামে এক ধরনের প্রাণীকে কামড়ালে, তাদের থেকে ব্যাকটেরিয়া মশার দেহে সংক্রামিত হয়। সেই মশা মানুষকে কামড়ালে, মানুষের শরীরে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুরুলি আলসারকে একটি অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় চর্মরোগ বলে উল্লেখ করেছে। প্রাথমিকভাবে পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকায় ৩৩ টি দেশে এর সংক্রমণ দেখা গেছে।
একটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবে পোকামাকড়ের ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজন থাকে। নেচার মাইক্রোবায়োলজিতে প্রকাশিত এই নতুন গবেষণায়, ভিক্টোরিয়ার ৩৫০ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়েছে। গবেষকরা মশা সংগ্রহ করে এবং নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে মশা রোগজীবাণু বহন করছে কিনা। মশার নমুনার আণবিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে দুটি সর্বাধিক পাওয়া যাওয়া এমন মশার প্রজাতির মধ্যে এডিস নোটোস্ক্রিপ্টাস প্রজাতি মাইকোব্যাকটেরিয়াম আলসারেন -এর ক্ষেত্রে ইতিবাচক।
এই ধরনের সংক্রমণ রোধের জন্য মশার বংশবিস্তার রোধ করা জরুরি, যা আমাদের ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের মতো সব ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া শরীর ঢাকা পোশাক, মশা নিরোধক ব্যবহার আমাদের কিছু সুরক্ষা দিতে পারে। বুরুলি আলসারের বৃদ্ধি উদ্বেগজনক হলেও অন্যান্য অনেক মশাবাহিত রোগও রয়েছে, যা মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারে। মশার কামড় এবং মাইকোব্যাকটেরিয়াম আলসারানের সংস্পর্শে এড়ানোর পদক্ষেপগুলি রস রিভার, বারমাহ ফরেস্ট, জাপানিজ এনসেফালাইটিস, মারে ভ্যালি এনসেফালাইটিস বা আমাদের পরিচিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে।