মশলাদার খাবারের প্রতি প্রত্যেকেরই আলাদা সহনশীলতা রয়েছে — কেউ কেউ ঝাল পছন্দ করে, আবার কেউ ঝাল সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু মশলাদার খাবার আমাদের স্বাস্থ্যের উপর – ইতিবাচক না নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা বেশ মিশ্র। মশলাদার খাবার বলতে গন্ধযুক্ত মশলা দিয়ে প্রস্তুত করা খাবারকে বোঝায়, যেমন এশিয়ান কারি, টেক্স-মেক্স ডিশ বা ঝাল লঙ্কাগুড়ো দিয়ে তৈরি হাঙ্গেরির এক ধরনের খাবার। ঝাল লঙ্কায় উপস্থিত রাসায়নিক যৌগ ক্যাপসাইসিনের বিভিন্ন মাত্রার উপর নির্ভর করে লঙ্কার ঝালের পরিমাণ। আর সেই লঙ্কা দিয়ে তৈরি করা খাবার সেটিকে মশলাদার করে তোলে। ক্যাপসাইসিনের স্বাদ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট জৈবিক পথকে সক্রিয় করে তোলে- ঠিক যেমন গরম তাপমাত্রায় হয়। মশলাদার খাবার দ্বারা উত্পাদিত অনুভূতি এন্ডোরফিন এবং ডোপামিন নিঃসরণে শরীরকে উত্তেজিত করে তোলে। এই প্রক্রিয়া শরীরে স্বস্তির অনুভূতি এমনকি উচ্ছ্বাসও বোধ করাতে পারে। অত্যন্ত মশলাদার খাবার খাওয়ার স্বল্পমেয়াদী প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝালের জন্য গরমবোধ থেকে শুরু করে আনন্দের অনুভূতি, ঠোঁট, জিভ এবং মুখ জুড়ে একটি অপ্রীতিকর জ্বালা ভাব। এই খাবারগুলো খওয়ার ফলে পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি, মাথাব্যথা এবং বমিভাব হয়। অনেকসময় মশলাদার খাবার মাইগ্রেন, পেটে ব্যথা, প্রদাহজনিত অন্ত্রের রোগে এবং ডায়রিয়ার মতো অপ্রীতিকর উপসর্গ সৃষ্টি করে, তখন এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই সম্ভবত ভালো। সারা বিশ্বের বহু মানুষের ক্ষেত্রে মশলাদার খাবার খাওয়া সেখানকার ভৌগলিক অবস্থান ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী জীবনধারার অংশ। উদাহরণস্বরূপ, লঙ্কা গরম জলহাওয়াতে জন্মায়, আর তাই সেখানকার মানুষেরা তাদের খাবারে ঝাল লঙ্কার ব্যবহার করে। কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় যে মশলাযুক্ত খাবার খাদ্যজনিত অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, আর তাই সেই অঞ্চলের সংস্কৃতি মশলাদার খাবার খাওয়ার উপর গুরুত্ব দেয়। পুষ্টি বিশেষজ্ঞ্ররা বহু বছর ধরে দীর্ঘমেয়াদী মশলাদার খাবার খাওয়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং সুবিধা উভয়ই অধ্যয়ন করেছেন। মশলাদার খাবার খেলে বহু রোগ হতে পারে যেমন স্থূলতা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, ক্যান্সার, আল্জাইমের রোগ, অম্বল এবং আলসার, মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা, ব্যথা সংবেদনশীলতা বা অন্য যে কোনো কারণবশত মৃত্যু।
এই মুহুর্তে, বৃহৎ জনসংখ্যা-ভিত্তিক গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে মশলাদার খাবার জনসংখ্যার মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে না বরং ঝুঁকি হ্রাস করে। তবে গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করার সময়, মনে রাখতে হবে যে মানুষ যা খায় তা তার জীবনধারণের উপর নির্ভর করে – যেমন শারীরিক কার্যকলাপ, আপেক্ষিক শরীরের ওজন এবং তামাক বা অ্যালকোহল সেবন – যা স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। জনসংখ্যা-ভিত্তিক গবেষণায় সঠিকভাবে খাদ্য এবং জীবনধারার প্রক্রিয়া পরিমাপ করা গবেষকদের পক্ষে সহজ নয়, কারণ লোকেরা সবসময় সেগুলো সঠিকভাবে মনে রাখে না বা বলে না। খাদ্য কীভাবে স্বাস্থ্যের একটি নির্দিষ্ট দিককে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে একটি দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে অনেক বছর ধরে পরিচালিত অসংখ্য গবেষণা প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি জানেন না কেন মানুষ এত মশলাদার খাবার উপভোগ করে আবার কেউ কেউ তা করে না। এর পিছনে বিবর্তনীয়, সাংস্কৃতিক এবং ভৌগলিক কারণের পাশাপাশি চিকিৎসা, জৈবিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয় সম্পর্কে প্রচুর জল্পনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা ইচ্ছাকৃতভাবে মসলাযুক্ত খাবার খায় যাতে তারা কষ্ট পায় এবং সবটাই নিজেদের আনন্দের জন্য।