মঙ্গল গ্রহের জেজেরো ক্রেটার হল একটা বিরাট গর্ত বা খাত, যেখানে পারসিভারেন্স রোভার অবতরণ করেছিল। এখানকার শিলার উপাদান থেকে বৈজ্ঞানিকরা মনে করছেন যে এই লাল গ্রহ জুড়ে জৈব পদার্থ আছে। আমাদের এই প্রতিবেশী লাল গ্রহে যে এই প্রথমবার জৈব অণু পাওয়া গেল, তা নয় কিন্তু যা প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তা হল মঙ্গল গ্রহ জুড়ে পৃথক পৃথক গঠনে জীবনের জন্য প্রাথমিক উপাদানগুলো ছড়িয়ে আছে।
পারসিভারেন্স রোভারের যন্ত্র স্পেকট্রোস্কোপির মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছে একাধিক শিলার গঠনে হাইড্রোকার্বন অণুর অস্তিত্ব আছে। তাছাড়াও বিভিন্ন শিলায় বিভিন্ন ধরনের জৈব অণুর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।
নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এই গবেষণার নেতৃত্বদানকারী ক্যালটেকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সুনন্দা শর্মা জানিয়েছেন, পারসিভারেন্স এর SHERLOC যন্ত্র ব্যবহার করে, তিনি এবং তার সহকর্মীরা কার্বনের রাসায়নিক ছাপ খুঁজতে গিয়ে মাজ এবং সেতাহ এই দুটো পাহাড়ের মতো শিলাতে রামন এবং ফ্লুরোসেন্স স্পেকট্রোস্কোপি প্রয়োগকরেন। তারা ভিন্ন চার ধরনের ফ্লুরোসেন্স সংকেত এবং তিন ধরনের রমন সংকেত পেয়েছেন, যার উৎস সম্ভবত জৈব। দেখে মনে হচ্ছে সেতাহ-এর তুলনায় মাজ-এ ফ্লুরোসেন্স সনাক্তকরণের সংখ্যা এবং ফ্লুরোসেন্স সংকেতের বৈচিত্র্য বেশি। তারা জেজেরো ক্রেটারের পৃষ্ঠে একাধিক শিলায় জৈব অণুর অস্তিত্বের সংকেত সনাক্ত করেছেন । তারা যে শুধুমাত্র নানা সংকেত পেয়েছেন তা নয়, তারা পাথরের মধ্যে মূল রাসায়নিক পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন। তাদের কাছে বিষয়টি যথেষ্ট আশ্চর্যজনক কারণ, এই ধরনের পার্থক্যের অর্থ এটা হতে পারে যে এই শিলাগুলোর পরিবর্তনের ইতিহাস আলাদা আলাদা।
কার্বন অণুর অস্তিত্ব থাকার অর্থ এই নয় যে সেখানে জীবন আছে তা প্রমাণিত হয়, কারণ বিভিন্ন অজৈব যৌগেও কার্বন থাকতে পারে কিন্তু জীবনের প্রাথমিক উপাদান কার্বন। বিভিন্ন শিলায় এর অস্তিত্ব দেখে মনে হয় সেখানে কোনো সময়ে প্রাণ ছিল বা প্রাণ ধারনের সহায়ক পরিস্থিতি ছিল।
যদিও সঠিক অণুগুলি এখনও সনাক্ত করা যায়নি, তবে সব গঠনেই জলীয় পরিবর্তনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। এর অর্থ হল জলের অস্তিত্ব, অতীতের বাসযোগ্য অবস্থার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
পারসিভারেন্স রোভার পৃথিবীতে ফেরত আসার পর তার আনা নানা নমুনা থেকে গবেষকরা আরো স্পষ্টভাবে বেশ কিছু বিষয় বুঝতে পারবেন।