মহাপ্লাবনের সময় সুবিশাল নৌকার গল্প পৃথিবীর সব পুরাণেই আছে। পৌরাণিক যুগ এখন নয়। কিন্তু সমুদ্রের উচ্চতা ক্রমশ বাড়ছে। সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত বিখ্যাত শহরের জন্য বিপদবার্তা অনেক বছর ধরেই শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ভাসমান নগরীর পরিকল্পনা তাই কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়। বরং ডুবতে থাকা মহানগরীর জন্য একটা অভূতপূর্ব সমাধান হতে পারে এই পরিকল্পনা।
ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আর বড়ো বড়ো ইমারতের চাপ। ইতিমধ্যেই জাকার্তা, সাংহাই, রেঙ্গুনের মতো উপকূলীয় শহরগুলোর উচ্চতা কমছে বিপদজনক হারে। এছাড়াও তালিকায় আছে বিশ্বের আরও তাবড় সব শহর। কিন্তু প্রশ্ন হল, জলের নিচে যদি শহরের সমাধি ঘটে তাহলে বাসিন্দাদের জন্য উপায় কী হবে? একটা সম্ভাব্য সমাধান হল মানুষকে ভাসমান শহরে পুনর্বাসন দেওয়া। সেক্ষেত্রে সমুদ্রের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের যথাসম্ভব ক্ষতি না করে ব্যবস্থার সফল রুপায়ন প্রয়োজন।
নির্দিষ্ট কোনও অঞ্চলের মাটি যখন বসে যেতে থাকে অর্থাৎ স্বাভাবিক স্থলভাগের উচ্চতার চেয়ে নিচে চলে যায়, তখন ভূবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে ‘ভার্টিকাল সাবসিডেন্স’ বলে। বিংশ শতকে এমনও দেখা গেছে যে কোনও কোনও উপকূলে এই ভার্টিকাল সাবসিডেন্সের মান ৯ মিটার অবধি। সারা পৃথিবী জুড়ে শহুরে জনসংখ্যার অন্তত ২০% এইসব ডুবন্ত মহানগরীতেই বাস করে। প্রতি বছর সেইসব শহর ১০ মিলিমিটারের বেশি হারে নিচের দিকে চলে যাচ্ছে।
যদিও ভাসমান বসতির পরিকল্পনা কিংবা দৃষ্টান্ত এই প্রথম নয়। পঞ্চাশের দশক থেকেই জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকে গবেষণার ছাড়পত্র দেওয়া আছে। এমনকি থাইল্যান্ড, ফিলিপিন্স অথবা ভিয়েতনামে ভাসমান গ্রাম আছে। ২০২৩ সালে এমনই এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প শুরু হবে দক্ষিণ কোরিয়ায়। প্রোটোটাইপের নাম দেওয়া হল ‘ওশিয়ানিক্স বুসান’।