ভারত তথা সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গি সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের। একটি কার্যকর ভ্যাকসিনের প্রয়োজন অনুভূত হয়েছে যা চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষেরই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০২২-এর মধ্যে ভারতের মাত্র আটটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে ভারতের সমস্ত রাজ্যে রোগটি ছড়িয়ে পরেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ অবধি সারা দেশে ৩১,৪৬৪ জন ব্যক্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩৬ জন মারা গেছে। মশাবাহিত এই রোগের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য দেশে বেশ কিছু প্রচেষ্টা চলছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, রক্ত চলাচলে বাধা এবং মৃত্যুও হতে পারে।
বর্তমানে, তিনটি সংস্থার ভ্যাকসিন ভারতবর্ষের মানুষদের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথমটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস দ্বারা তৈরি চারটি ডেঙ্গির সেরোটাইপের জীবন্ত কিন্তু দুর্বল সংস্করণের উপর ভিত্তি করে প্যানাসিয়া বায়োটেক দ্বারা নির্মিত একটি ভ্যাকসিন। সংস্থাটি ইতিমধ্যে ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১০০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি ফেজ I/II গবেষণা সম্পন্ন করেছে যেখানে দেখা গেছে যে কোনও গুরুতর প্রতিকূল ঘটনা ঘটেনি এবং ৭৫% এরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চারটি ডেঙ্গির সেরোটাইপের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতি অনুসরণ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট একটি ভ্যাকসিন তৈরি করে যার ফেজ I ট্রায়াল ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ভ্যাকসিনটি ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৬০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়া হয়েছে এবং তা সফল হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়, ICMR-এর সাথে যৌথ উদ্যোগে ২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষা করা হবে। একই প্রযুক্তি ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্স লিমিটেড একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে ব্যবহার করেছে এবং এর ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৯০ জন ব্যক্তির মধ্যে প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি ডেঙ্গির বিরুদ্ধে আরও দুটি দেশীয় ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে। উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে আসার জন্য একই ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে। ডেঙ্গির ভ্যাকসিন তৈরির প্রধান চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হল অ্যান্টিবডি-ডিপেন্ডেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট (ADE) অর্থাৎ যে ব্যক্তির ডেঙ্গির একটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে কম পরিমাণে অ্যান্টিবডি রয়েছে, সে ডেঙ্গির অন্য একটি সেরোটাইপের জন্য আরও গুরুতরভাবে সংক্রমিত হতে পারে। প্রথম ডেঙ্গি ভ্যাকসিন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফিলিপাইনে একটি টিকাদান কর্মসূচি চালু হওয়ার পরই দেখা গেছে যে ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে যারা আগে সংক্রমিত হয়নি তাদের গুরুতরভাবে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য, উভয় ভারতীয় গবেষণা দল এনভেলপ প্রোটিনের একটি নির্দিষ্ট অংশ নির্বাচন করেছে যা ADE সৃষ্টি করে না। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির (আইসিজিইবি) দলটি ভাইরাসের এই অংশ ব্যবহার করে একটি ভাইরাসের মতো পার্টিকেল তৈরি করে। বর্তমানে দেখা গেছে যে ভ্যাকসিনটি চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রায় ১০০% সুরক্ষা প্রদান করে। এটি ইঁদুর এবং বানরের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে তবে এখনও মানুষের মধ্যে পরীক্ষা করা হয়নি। সান ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে।