অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট হল রক্তের ক্ষুদ্র বর্ণহীন ও নিউক্লিয়াসবিহীন ডিম্বাকৃতির মতো উপাদান যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এবং রক্তপাত বন্ধ করে। অণুচক্রিকার কোনো কোশ নিউক্লিয়াস নেই; এরা ফুসফুসের মেগাক্যারিওসাইট থেকে উদ্ভূত সাইটোপ্লাজমের অংশবিশেষ যা পরে সংবহনে প্রবেশ করে। প্লেটলেটের মধ্যে কিছু দানার মতো উপাদান রয়েছে যার থেকে নির্গত রাসায়নিক, প্লেটলেটের অ্যাগ্রিগেশন বা সমষ্টিকরণে সাহায্যে করে। সক্রিয় প্লেটলেট দ্বারা নির্গত ছোটো কেমোকাইন প্রোটিনকে বলে প্লেটলেট ফ্যাক্টর 4 (PF4)। কোনো আঘাত বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই প্রোটিন PF4 শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্যে করে। বর্তমানে এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনি থেকে নির্গত ক্লোথো নামে একটি এনজাইমের মাধ্যমে প্লেটলেট অ্যান্টি-এজিং মেকানিজমেও সাহায্যে করে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে বয়স্ক ইঁদুরকে PF4 দিয়ে ইনজেকশন দেওয়ায় তাদের মস্তিষ্কে প্রদাহ কমে যায় এবং এদের স্মৃতিশক্তিও উন্নত হয়, তাছাড়াও বয়স হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শারীরিক কিছু অক্ষমতা দেখা যায় যা এটি কমাতে সাহায্য করে। অধ্যয়নটি প্যারাবায়োসিস নামে পরিচিত পূর্ববর্তী গবেষণার উপর ভিত্তি করে হয়েছে যেখানে অল্প বয়স্ক মানুষ বা কোনো প্রাণীর দেহের রক্ত একটি বয়স্ক মানুষ বা প্রাণীকে দিলে সেই মানুষ বা প্রাণীটি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে কারণ এই অল্পবয়সীদের রক্তে PF4 –এর পরিমাণ বেশি থাকে। ইঁদুরের উপর করা আর একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ঝিল্লি প্রোটিন ক্লোথোর সাথে PF4 সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন। ক্লোথো বৌদ্ধিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটায় এবং PF4 সেটিকে ডান মস্তিষ্কের অঞ্চলে স্থানান্তরিত করতে সাহায্য করে। ক্লোথো ইনজেকশন দেওয়ার পরে অল্প বয়স্ক ইঁদুর এবং বয়স্ক ইঁদুর উভয়ের আচরণের ক্ষেত্রেই উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। ক্লোথোর কারণে PF4 নির্গত হয় যা মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে নতুন সংযোগ গঠনকে উন্নত করে আর এর ফলে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। হিপোক্যাম্পাস দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি গঠন এবং স্মৃতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে যুক্ত। তৃতীয় গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্যায়াম ইঁদুরের রক্তে আরও বেশি পরিমাণে PF4 নির্গত করে। PF4 নতুন মস্তিষ্কের কোশ তৈরি করতে সাহায্য করে, এবং বয়স্ক ইঁদু্রের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
আমরা জানি যে ব্যায়াম মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করে তাই বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে PF4-এর এতে ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতে, থেরাপিতে কিছু ব্যায়াম সংযোজিত হতে পারে যা অক্ষম ব্যক্তিকে সক্রিয় করে তুলতে পারবে। যদিও এই গবেষণা প্রধানত ইঁদুরের উপর করা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি সম্ভবত মানবদেহেও প্রযোজ্য, তাই PF4 “মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের বার্তাবাহক” হিসেবে ভবিষ্যতে চিকিত্সা পদ্ধিতিতে সাহায্য করতে পারে। এমনটাই বিজ্ঞানীদের অনুমান।