পৃথিবীর রাতের আকাশে, প্রধানত উচ্চ-অক্ষাংশ অঞ্চলে ( আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিক চারপাশে) অর্থাৎ মেরু অঞ্চলে কখনো কখনো উজ্জ্বল আলোর রোশনাই দেখা যায় যা ইংরেজিতে অরোরা (aurora) বা পোলার লাইট, নর্দার্ন লাইট বা সাউদার্ন লাইট নামে পরিচিত। এই অরোরা আকাশে বিভিন্ন গতিশীল প্যাটার্ন প্রদর্শন করে যা কখনো পর্দার মতো দেখতে লাগে, কখনো বা আলোর কিরণের মতো, আবার কোনো সময়ে সর্পিল বা গতিশীল ফুলকির মতো সমগ্র আকাশকে ঢেকে রাখে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহের চৌম্বকক্ষেত্রে সৌর ঝড় যখন বাধার সৃষ্টি করে তখন ম্যাগনেটোস্ফিয়ারিক প্লাজমাতে চার্জযুক্ত কণার গতিপথ পরিবর্তিত হয়।এই কণাগুলো, প্রধানত ইলেকট্রন এবং প্রোটন, যা বায়ুমণ্ডলে উপরের স্তরে (থার্মোস্ফিয়ার/ এক্সোস্ফিয়ার) অবস্থান করে। বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানের আয়নকরণ এবং গতিবিধির কারণে বিভিন্ন রঙের আলো বিচ্ছরিত হয়। দুটি মেরু অঞ্চলের চারপাশে ব্যান্ডের মধ্যে এই আলোর রোশনাই বা অরোরা দেখতে পাওয়া যায় যা অধঃক্ষেপিত কণার ত্বরণের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। আমাদের সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহে এই অরোরা দেখা যায়। গবেষকদের মতে আজ সেই তালিকায় বুধের নামও যুক্ত হল।
ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট সারা আইজাওয়া ও তার সহকর্মীরা অনুসন্ধান করে দেখেছেন সৌরজগতের অভ্যন্তরীণ গ্রহ, বুধেও, এই ধরনের মেরু প্রভা বা অরোরা দেখা গেছে যদিও বুধে কার্যত কোনো বায়ুমণ্ডলের অস্তিত্ব নেই। যেহেতু বুধ সূর্যের খুব কাছাকাছি, তাই ক্রমাগত বিকিরণ এবং সৌর ঝড় এসে বুধে ধাক্কা মারে। তাই গ্রহটির তথাকথিত বায়ুমণ্ডল নেই কিন্তু একটা পাতলা এক্সোস্ফিয়ার রয়েছে যেটা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সাহায্যে গ্রহের সাথে আবদ্ধ। বেপিকলম্বো মিশনের মহাকাশযান বুধের ইলেকট্রন এবং আয়ন পরিমাপ করেছে, তাদের ত্বরণের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। বুধের একটি চৌম্বক ক্ষেত্র রয়েছে, তবে তা বেশ দুর্বল। বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে একটি ক্ষীণ এক্স-রে নির্গত হয়। সুতরাং, বায়ুমণ্ডল ছাড়াও একটি ক্ষীণ চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে বুধেও ফ্লুরোসেন্ট এক্স-রের আলো দেখতে পাওয়া গেছে যা গবেষকরা মনে করছেন – অরোরা । গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।