সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে স্ট্রোক, মাইগ্রেন এবং ডিমেনশিয়া জাতীয় রোগ যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে তা আজ বিশ্বব্যাপী হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্যহানিকর রোগকেও ছাড়িয়ে অসুস্থতার প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। সমীক্ষায় জানা গেছে ৩.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ – বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪৩%, ২০২১ সালে স্নায়ুতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গবেষণাটি ইউএস-ভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এর নেতৃত্বে বিভিন্ন গবেষক দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আইএইচএমই-এর গবেষক জেইমি স্টেইনমেটজের মতে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এখন বিশ্বে রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। গত তিন দশকে এই অবস্থা ৫৯% বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ বিশ্বে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ও জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষকরা ১৯৯০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০৪টি দেশ ও অঞ্চল জুড়ে ৩৭টি ভিন্ন স্নায়বিক রোগ কীভাবে অসুস্থতা, অক্ষমতা এবং অকাল মৃত্যুকে প্রভাবিত করেছে তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই রোগের কারণে মানুষ তার সুস্থ জীবনের কতটা সময় হারিয়েছে তা অনুমান করার জন্য এই তথ্য ব্যবহার করা হয়েছিল, বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ডিসএবিলিটি-অ্যাডজাস্টেড লাইফ ইয়ারস (DALYs)। গবেষণায় দেখা গেছে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধির কারণে ৪৪৩ মিলিয়ন বছরেরও বেশি স্বাস্থ্যকর জীবন মানুষ হারিয়েছে, যা ১৯৯০ থেকে ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। স্ট্রোক, যা আগে হৃদরোগ হিসাবে গণ্য করা হত, আজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এই রোগে মানুষের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ১৬০ মিলিয়ন বছরের সুস্থ জীবন মানুষ হারিয়েছে। এরপর আসছে নবজাতকদের এনসেফালোপ্যাথি, মাইগ্রেন, অ্যালজাইমার রোগ, ডিমেনশিয়া, ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি, মেনিনজাইটিস এবং মৃগী রোগ থেকে স্নায়ুর ক্ষতি। কোভিড ১৯ রোগের কারণে বৌদ্ধিক সক্ষমতা হারানো এই তালিকায় ২০ নং স্থানে রয়েছে। অল্প বয়সে শিশুর মৃত্যু ঘটার ফলে সুস্থ জীবনের অনেকগুলো বছর মানুষের হারিয়ে যাচ্ছে। দ্য ল্যানসেট নিউরোলজি জার্নালের সমীক্ষা অনুসারে, ২০২১ সালে ৩৭ টি স্নায়ু রোগের কারণে ১১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। যদিও ২০২২ সালে দেখা গেছে বিশ্বব্যাপী ১৯.৮ মিলিয়ন মানুষ হার্টের রোগে মারা গেছে। স্নায়ুর রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ স্নায়বিক ব্যাধি হল টেনশনের কারণে মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেন। ডায়াবেটিসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এবং এই রোগের থেকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামক স্নায়ুর ক্ষতি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থার বেশিরভাগের কোন প্রতিকার নেই। তবে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং অ্যালকোহল সেবনের হার হ্রাস করলে রোগের ঝুঁকি কমবে। সুতরাং রোগ প্রতিরোধ, চিকিত্সা এবং পুনর্বাসনের জন্য আরও বেশি কিছু করতে হবে কারণ দরিদ্র দেশগুলো এর দ্বারা অসমভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। গবেষকদের মতে বিশ্বব্যাপী স্নায়বিক রোগ খুব দ্রুত বাড়ছে এবং আগামী দশকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করবে।