খাদ্য উৎপাদন বিশ্বের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী এবং সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণও বটে। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত নতুন গবেষণায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির গবেষকরা জানিয়েছেন যে বেশ কয়েকটি প্রধান খাদ্য উত্পাদনকারী অঞ্চলে একই সাথে কম ফলন হতে পারে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি এবং জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের গবেষক, কাই কর্নহুবার বলেছেন, এই ঘটনার ফলে মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এমনকি নাগরিকদের মধ্যে অস্থিরতাও দেখা দেবে।
জেট স্ট্রিম হল এক শক্তিশালী বাতাস বা বায়ু স্রোত যা সাধারণত পশ্চিম থেকে পূর্বে সারা বিশ্বে প্রবাহিত হয়। আবহাওয়ার উপর প্রভাব ফেলে এই জেট স্ট্রিম। গবেষকরা তাই প্রথমে জেট স্ট্রিমের প্রভাব দেখার চেষ্টা করছিলেন। এই বায়ু স্রোত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসল উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর আবহাওয়ার উপরও প্রভাব ফেলে। তারা দেখেছেন যে, জেট স্ট্রিমের বড়ো তরঙ্গের আকারে প্রবাহিত হওয়া আঁকাবাঁকা গতিপথ, উত্তর আমেরিকা, পূর্ব ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ার প্রধান কৃষি অঞ্চলগুলোতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, যার ফলে ফসলের পরিমাণ সাত শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। আর অতীতে এর কারণেই ফসলের পরিমাণ কম ছিল।উদাহরণস্বরূপ ২০১০ সালে, এই জেট স্ট্রিমের কারণে রাশিয়ার কিছু অংশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং পাকিস্তানে বিধ্বংসী বন্যা উভয়ই ঘটেয়েছিল । আর এর কারণে দুজায়গাতেই ফসলের ক্ষতি হয়েছিল।
কর্নহুবার বলেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কীভাবে খাদ্য উৎপাদনকে বিঘ্নিত করছে সে সম্বন্ধে সজাগ থাকা প্রয়োজন। তার মতে আবহাওয়ার এই তীব্রতা আরও ঘন ঘন হবে এবং এর জটিলতাও বৃদ্ধি পাবে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের এই ধরনের জটিল জলবায়ু ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ।২০২১ সালে ৮২ কোটি মানুষের খাদ্যাভাব ঘটেছিল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা আরও ৮ কোটি বেড়ে যেতে পারে।