আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) হল সমুদ্রের জলস্রোতের প্রবাহ অভিমুখ যার মধ্যে উপসাগরীয় প্রবাহও অন্তর্ভুক্ত। এই AMOC ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উত্তর গোলার্ধে সমুদ্রের তাপ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি পৃথিবীর জলবায়ুর অন্যতম প্রধান প্রভাবক। পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপিং উপাদানগুলির মধ্যে একটি হিসাবে এটি বিবেচিত হয় এবং দেখা যাচ্ছে ১৯০০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এর প্রবাহ ধীর হয়ে আসছে। যদি এই প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে স্থগিত হয়ে যায়, তবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বর্ষা ব্যাহত হবে এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ভয়ঙ্কর কঠোর শীতের সম্মুখীন হবে। এর গতি স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাবে সমগ্র বাস্তুতন্ত্র ও আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হবে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতিটি জীব বিপন্ন হবে।
নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণাতে বলা হচ্ছে আটলান্টিকের প্রধান সামুদ্রিক ব্যবস্থা অর্থাৎ সামুদ্রিক প্রবাহ ২০২৫ সালের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানী পিটার ডিটলভসেন এবং পরিসংখ্যানবিদ সুজান ডিটলভসেন বলেছেন তারা গণনা করে দেখেছেন কখন প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জন্য প্রাথমিক সতর্কতার লক্ষণগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে থাকে। তারা বলেছেন, আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ববর্তী রেকর্ড ও সারা বিশ্বে বর্তমান তাপের চরম মাত্রার ভিত্তিতে বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক। গবেষকরা যে সমস্ত মডেলের ভিত্তিতে তাদের গবেষণায় আমাদের সতর্ক করেছেন তা হল সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও সমুদ্রের সঞ্চালনের মধ্যে মিল খোঁজা, এবং তাদের বিবেচিত অন্য প্রাথমিক সতর্কতা চিহ্নটি হল সিস্টেমে স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পাওয়া। গবেষক দলের মডেলিং অনুযায়ী এই গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র সঞ্চালন ২০২৫ সালের প্রথম দিকেই স্থগিত হতে পারে অন্যথায় খুব দেরি হলেও ২০৯৫ সাল এর ভিতরে এটি থেমে যেতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।
গবেষকের দল উপসংহারে বলেছেন, AMOC-এর পতন নিয়ন্ত্রণ করে তাকে পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রধান পন্থা হল বিশ্বব্যাপী গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন কার্যকরীভাবে হ্রাস করার ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। মানুষের কাজের ফলে যা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত কমানোর চেষ্টা করা, তা নাহলে অচিরেই জীবজগত চরম বিপদের মুখোমুখি হবে।