সম্প্রতি এক গবেষণা অনুসারে প্রতি বছর, বিশ্বব্যাপী এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্বল্পমেয়াদ অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের জন্য বায়ু দূষণের সূক্ষ্ম কণা পদার্থ বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5)- এর প্রভাবের কারণে প্রাণ হারায়। PM2.5 দূষণের কারণে সারা বিশ্বের মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি ঘটে পূর্ব এশিয়ায়। আজ অবধি বেশিরভাগ গবেষণা ঘটেছে শহরকে কেন্দ্র করে যেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা ধারাবাহিকভাবে অনেক বেশি ফলত স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব বেশ গুরুতর। কিন্তু সে সব গবেষণা অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ করে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া বা দূষণের এই “স্পাইক” উপেক্ষা করেছে যা ছোটো ছোটো শহরাঞ্চলকে প্রভাবিত করতে পারে। মোনাশ ইউনিভার্সিটি, দুই দশকে বিশ্বজুড়ে ১৩০০০-এরও বেশি শহর ও ছোটো ছোটো শহরাঞ্চলে PM2.5-এর দূষণের মাত্রা এবং মৃত্যুহার নিয়ে অধ্যয়ন করেছে যা দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন যে PM2.5-এর দূষিত অঞ্চলে কয়েক ঘন্টার থেকে কয়েক দিনের জন্য শ্বাস নেওয়ার ফলে প্রতি বছর সারা বিশ্বে, বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকায় এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। দেখা গেছে এই সব মৃত্যুর পাঁচ ভাগের মধ্যে এক ভাগ অর্থাৎ ২২.৭৪% শহর এলাকায় ঘটেছে। অধ্যাপক গুওর মতে, বায়ু দূষণের কারণে স্বল্পমেয়াদী স্বাস্থ্যগত প্রভাবগুলো ভালোভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। যেমন ২০১৯-২০ সালের তথাকথিত ব্ল্যাক সামারের সময় অস্ট্রেলিয়ায় এক বিশাল দাবানলে উৎপন্ন ধোঁয়ার কারণে হওয়া তীব্র বায়ু দূষণের ফলে ৪২৯ জনের অকাল মৃত্যু ঘটে এবং ৩২৩০ জন ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়। অধ্যাপকের মতে এই ধরনের বায়ু্ দূষণ স্বল্পমেয়াদী হলেও শহরাঞ্চলে উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে এর প্রভাব বেশ গুরুতর হয়, সুতরাং এই ধরনের এলাকায় PM2.5-এর স্বল্পমেয়াদী এক্সপোজারের সাথে সম্পর্কিত মৃত্যুর হার ও দূষণের নেতিবাচক প্রভাব প্রশমিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা অনুসারে PM2.5 দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রায় ৬৫.২% ঘটছে এশিয়ায়, ১৭% আফ্রিকায়, ১২.১% ইউরোপে। পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকার জনাকীর্ণ, অত্যন্ত দূষিত এলাকায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সমীক্ষাটি সুপারিশ করে – যেখানে তীব্র বায়ু দূষণের কারণে স্বাস্থ্য সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় সেখনে লক্ষ্য নির্দিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হবে যেমন বায়ু-দূষণ সতর্কতা ব্যবস্থা এবং জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরিত করা যাতে স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব এড়ানো যেতে পারে।