ছোটো ছোটো, প্রায় অদৃশ্য কণা- যার আকার মানুষের চুলের প্রস্থের ৩০ গুণেরও কম সারা বিশ্বের ৭৫০ কোটিরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে চলেছে। এই আণুবীক্ষণিক কণা দূষণ ইংরেজিতে যাকে PM2.5 বলে আগামী দিনে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স এমন এক অবস্থা যখন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ওষুধের ক্ষেত্রে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। ল্যানসেট প্ল্যানেটারি জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন বিশ্লেষণে বলা হয়েছে যে উভয়ের মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে: বায়ু দূষণের প্রতি ১০% বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, গবেষকরা দেশ এবং মহাদেশ জুড়ে ১.১% অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের একটি বৃদ্ধি লক্ষ করেছেন।
গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করেছেন। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) অর্থাৎ যখন কোনো জীবাণু ওষুধের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে তখন ওষুধ ঠিকমতো কাজ না করায় বহু মানুষ মারা যায়। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্রায় ১.২৭ মিলিয়ন মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী এবং বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৪.৯৫ মিলিয়ন মৃত্যুর সাথে যুক্ত। ডাক্তার কামিনী ওয়ালিয়া, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR)-এর একজন বিজ্ঞানী গত বছর সতর্ক করেছেন যে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স’ অদূর ভবিষ্যতে একটি মহামারী রূপ নিতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বিভিন্ন রোগ, দুর্বল জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে এই মহামারী হতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে রয়েছে। মানুষ এবং পশুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি পালন না করা এবং সচেতনতার অভাব এই বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। গবেষকরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ছড়ানোর জন্য বায়ুকে “মূল ভেক্টর” হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। যেমন, রান্না বা গরম করার জন্য বাড়িতে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর ফলে PM2.5 নির্গমন হয় আর এই PM2.5 ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জিন বহন করে বহু দূরে নিয়ে যায় আর এই ব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জিন শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ঢুকে যায়। বাতাসের PM2.5 রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে চূর্ণ করে শরীরে রক্ত ও ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং হাঁপানির মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ সৃষ্টি করে। গবেষকদের মতে যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের চেয়ে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্সের জন্য বেশি দায়ী হল বাতাসের PM2.5 যার মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পরে।