আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় মাংস থাকা আমাদের পৃথিবীর পক্ষে বিশেষ ভালো নয়। কারণ সমগ্র খাদ্য উৎপাদন শিল্পের মধ্যে মাংস উৎপাদনের ফলে ৫৭ শতাংশ গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। এর ফলে বহুল পরিমাণে গাছ কেটে বন উজাড় হয়, তাতে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় যা জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ফ্যাক্টরি ফার্মিং থেকে মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রেও এটি সত্য, এতে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন নির্গত হয়, যা পৃথিবীর তাপকে বায়ুমণ্ডল থেকে বেরোতে দেয় না।
অস্ট্রেলিয়ার ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হারপেটোলজিস্ট ড্যানিয়েল নাটুশ এবং সহকর্মীরা বাণিজ্যিকভাবে অজগর চাষের সম্ভাবনা এবং প্রচলিত গবাদি পশুর তুলনায় এই চাষের পরিবেশগত খরচ হিসেব করেছেন। সাপের মাংস খাওয়া চিন, দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকাতে বেশ প্রচলিত। সাপের মাংসে উচ্চ প্রোটিন, কম ফ্যাট পাওয়া যায়। বাণিজ্যিক সাপ উৎপাদন নিয়ে গবেষকদের ফলাফল বেশ আশাব্যঞ্জক – কারণ সাপ দ্রুত বাড়ে, উপবাসের সময়েও তারা বৃদ্ধি পায়, আর তারা যা খাবার খেয়েছিল যেমন মুরগি এবং ইঁদুর, তার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে অজগরের মাংস তৈরি হয়। অন্যান্য মাংস শিল্প থেকে উৎপাদিত বর্জ্য প্রোটিনও সাপকে খাওয়ানো যেতে পারে। তার মনে করছেন পাইথন চাষ বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার জন্য এক ধরনের ভালো সমাধান হতে পারে।
গবেষকরা দুটি অজগরের প্রজাতি মালায়োপিথন রেটিকুলাটাস এবং পাইথন বিভিটাটাস নিয়ে, তাদের থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের খামারগুলোতে ১২ মাসেরও বেশি সময় ধরে পালন করে তারপর জবাই করেছিলেন। তারা দেখেন যে অজগরের উত্পাদিত মাংসের সাথে খাওয়া খাবারের অনুপাত ছিল ১.২, যা স্যামনের ক্ষেত্রে ১.৫ পোল্ট্রির ক্ষেত্রে ২.৪ শুকরের ক্ষেত্রে ৬.০ এবং গরুর মাংসের ক্ষেত্রে ১০.০। আর একটা সুবিধা হল, সাপের উপবাসের সময় ওজন কমে না। যেখানে খাদ্য ও জলের অপ্রতুলতা সেখানে সাপ চাষ আদর্শ।
সাপকে খাবার দেওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ, তার জন্য যথেষ্ট দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। আর এই অজগরের মাংসের স্বাদ কেমন তা গবেষণায় জানানো হয়নি। গবেষকরা জানিয়েছেন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত অন্যন্য প্রাণী প্রজাতির তুলনায় অজগরের জীববিজ্ঞান এবং পালনের প্রয়োজনীয়তা এখনও বিশেষ জানা নেই। তার ওপর সাপের প্রতি মানুষের সাধারণ একটা ভয় আছে, তাই বৈশ্বিক স্তরে অজগর চাষের সম্ভাবনা বুঝতে সময় লাগবে। এই গবেষণা সায়েন্টিফিক রিপোর্টস-এ প্রকাশিত হয়েছে।