এ যেন ঠিক ডুয়েল। একদিকে প্রাকৃতিক শক্তি – বজ্র। অন্যদিকে – অত্যন্ত শক্তিধর লেজার রশ্মি। তাতে নাকি বজ্রপাতের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। নতুন গবেষণা এমনই দাবী করছে।
নেচার পত্রিকার ফোটোনিক্স বিভাগে বেরিয়েছে এই গবেষণাপত্র। এমনিতে বড়ো বড়ো ইমারতের উপরে বজ্রশলাকা ব্যবহার করা হত এতদিন। আঠারশ শতকের আবিষ্কারক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের নামে এই বজ্রনিরোধকের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্রাঙ্কলিন’স রড’।
কিন্তু লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বাজ পড়ার অভিমুখ পাল্টে দেওয়ার চেষ্টাটা আজকের নয়। ষাটের দশক থেকে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষানিরীক্ষায় লিপ্ত রয়েছেন। এর পেছনের যুক্তিটা কেমন? শক্তিশালী লেজার রশ্মির পালস বাতাসে অল্প পরিমাণে প্লাজমা সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো ফিলামেন্ট বলে। এই ফিলামেন্টের দ্বারা বিদ্যুতের অভিমুখ বদলে যায়। কিন্তু হাতেকলমে পরীক্ষা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৪ সালে মার্কিন মুলুকে, তারপর ২০১১-তে সিঙ্গাপুরে।
কিন্তু ফ্রান্সের ইকোল পলিটেকনিকে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটা দল এবার সফল হল। সুইজারল্যান্ডের স্যান্টিস পর্বতের চুড়োয় টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ারে গাড়ির মাপের একটা টেরাওয়াট লেজার যন্ত্র বসানো হয়। ঐ অঞ্চলটাতে ঝড়ঝঞ্ঝা আর বজ্রপাতের ঘটনা এমনিতেই সারা বছর জুড়ে চলতে থাকে। গত বছরের জুলাই আর সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সফলভাবে ছ ঘণ্টা ধরে প্রবল বজ্রবিদ্যুতের আবহাওয়াতে কাজ করেছে ঐ যন্ত্র। চারটে বজ্রপাতের মোড় সত্যিই অনেকদূর ঘুরিয়ে দেওয়া গেছে।
পরীক্ষামূলক এই গবেষণার সমস্তটাই ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়েছিল। লেজার আর বজ্রের সংঘাতের সময় তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ আর এক্সরে বিস্ফোরণ ধরা পড়েছে অত্যাধুনিক ক্যামেরাতে। সম্প্রতি তথ্যপ্রমাণ সমেত গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।