বয়ঃসন্ধি এমন এক সময় যখন শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয়, প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তরণের এই সময়ে ছেলে ও মেয়ে দুজনেরই শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এই সময় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে ‘গ্রোথ হরমোন’ নামক এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ নিঃসরণ হয়। শরীর দ্রুত বদলায়। ছেলে, মেয়ে উভয়েরই উচ্চতা বাড়ে, কণ্ঠস্বরের বদল ঘটে। এই সময় প্রায়শই, শরীরের গন্ধ আরও তীব্র হয়। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন কিছু যৌগ চিহ্নিত করেছেন যা কিশোর-কিশোরীদের সহজাত শরীরের ঘ্রাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের শরীরের ঘ্রাণ ভিন্ন। কিশোর-কিশোরীদের শরীরের ঘ্রাণের জন্য দায়ী দুটি গন্ধযুক্ত স্টেরয়েড এবং কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা। গবেষকরা কমিউনিকেশন কেমিস্ট্রি জার্নালে এক রিপোর্টে এই কথা বলেছেন। আমাদের ত্বককে আর্দ্র রাখতে এক ধরনের তেল নির্গত হয় যাকে সিবাম বলে। যখন আমাদের ত্বকের ব্যাকটেরিয়া বাহুমূলের ঘাম এবং সিবামকে ভেঙে দেয় তখন এই রাসায়নিকগুলো তৈরি হয় যা বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের ঘ্রাণের জন্য দায়ী। গবেষকদের মতে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীরের গন্ধ পরিবর্তিত হয়। শরীরের ঘ্রাণের জন্য বিভিন্ন গন্ধযুক্ত যৌগ দায়ী। গবেষকরা ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ১৮ টি কিশোরকিশোরী এবং ০ থেকে ৩ বছর বয়সী ১৮ টি ছোটো বাচ্চাদের শরীরের ঘ্রাণের নমুনা সংগ্রহ করে দেখেন যে ছোটো শিশু এবং কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ৪০টিরও বেশি যৌগের মিল রয়েছে। যদিও কিছু রাসায়নিক সব বয়সেই পাওয়া গেছে কিন্তু কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের ঘ্রাণ বয়ঃসন্ধিকালে বেশি দেখা গেছে। এই যৌগগুলোর মধ্যে কিছুর ঘ্রাণ মনোরম যেমন ফল বা সুগন্ধি সাবানের মতো আবার কিছুর ঘ্রাণ বেশ তীব্র, ঝাঁঝালো। গবেষকরা শুধুমাত্র কিশোর কিশোরীদের শরীরের ঘ্রাণে উপস্থিত দুটি স্টেরয়েড শনাক্ত করেছেন- 5α-androst-16-en-3-one এবং 5α-androst-16-en-3α-ol। তবে গবেষকরা শরীরের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য দায়ী কিছু যৌগ শনাক্ত করতে পারেনি। তাদের মতে এই রাসায়নিকগুলোর জন্য ভিন্ন শনাক্তকরণ কৌশল প্রয়োজন, অথবা ব্যায়াম করার পরে বা ঘাম ঝরানোর পরে সেগুলো আরও বেশি পাওয়া যায়।