পৃথিবীতে ৬.৭ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার জুড়ে আমাজনের মতো আদিম জায়গা খুবই কম রয়েছে। কার্যত মাটির প্রতিটি অংশ, প্রতিটি পাতা, জলের প্রতিটি তরঙ্গ মানুষের প্রভাবমুক্ত বলে মনে হয়। তবুও গাছের শিকড়ের জালের বুনন, পচনশীল গাছপালা, ধূলোর নীচে এবং বিস্তৃত সবুজের জঙ্গলে লুকিয়ে আছে, হাজার হাজার বছর আগের মানুষের বাসস্থানের প্রমাণ।
একটি নতুন গবেষণায়, ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চের রিমোট-সেন্সিং বিজ্ঞানী ভিনিসিয়াস পেরিপাটো ও তার গবেষকদের দল ৫৩১৫ বর্গকিলোমিটার জুড়ে মাটির লিডার ডেটা শনাক্ত করেছেন। লিডার হল এক ধরনের আলোক-ভিত্তিক রাডার সিস্টেম, এটা বিমান থেকে নির্গত হয়ে লেজার ফ্ল্যাশ ব্যবহার করে পাতার স্তর, মাটি এবং অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে কাঠামোর বৈচিত্র পরিমাপ করার পাশাপাশি মানুষের চিহ্ন শনাক্ত করতে কাজে লাগে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে মায়া সভ্যতা খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, এখন তা আমাজনের জঙ্গলে মানুষের বসবাসের ছাপ খুঁজে বের করেছে।
গবেষকরা দক্ষিণ অ্যামাজোনিয়ায় একটি সুরক্ষিত গ্রাম, দক্ষিণ-পশ্চিম অ্যামাজোনিয়ায় প্রতিরক্ষামূলক এবং অনুষ্ঠান করার অঞ্চল, গায়ানা শিল্ডে মেগালিথিক কাঠামো এবং মধ্য আমাজনিয়ার প্লাবিত সমভূমিতে নদীতীরবর্তী স্থানগুলি শনাক্ত করেছেন। অ্যামাজনের দক্ষিণে একটি অঞ্চলের মধ্যে পাওয়া গেছে একটি প্লাজা শহর যা রাস্তার নেটওয়ার্কের দ্বারা সংযুক্ত ছিল ,মনে করা হচ্ছে একসময় এখানে হাজার হাজার মানুষের বাসস্থান ছিল। এই শহরের গঠন প্রাচীন ইউরোপের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো৷ দক্ষিণ-পশ্চিমে, গবেষকরা নানা অদ্ভুত জ্যামিতিক মোটিফ আবিষ্কার করেছেন। গবেষকরা মনে করছেন আমাজনের গভীর অরণ্যে ১০০০০ থেকে ২৪০০০ সংখ্যক মানুষের তৈরি কাঠামো এখনও কয়েক শতাব্দীর পাতার আবর্জনা, পলি এবং বনের নীচে লুকিয়ে থাকতে পারে। তারা মনে করেন যে অ্যামাজনের মানব ইতিহাসের ৯০ শতাংশেরও বেশি এখনও উন্মোচিত করা যায়নি। গবেষকরা মনে করছেন এই অঞ্চলগুলির অবশিষ্টাংশ ট্র্যাক করা জানা যেতে পারে যে কীভাবে মানব সংস্কৃতি বনকে রূপান্তরিত করে বসবাস করত যাতে এই ধরনের আকার এবং বৈচিত্র্যের সম্প্রদায় ও অরণ্য পরস্পর সহাবস্থান করতে পারে। এই গবেষণাটি সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে।