পৃথিবীতে প্রাণের উপস্থিতি এক বিস্ময়। সৌরমণ্ডলের অন্য গ্রহে প্রাণ নেই। এই ব্যতিক্রম বিস্ময়ের উদ্রেক না করে পারে না। আমরা জানিনা ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগে কীভাবে পৃথিবীতে জীবন শুরু হয়েছিল, তবে এক নতুন গবেষণা এই ধারণাটিকে সমর্থন করে যে আমাদের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষদের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো সমুদ্রের তলদেশে প্রাচীন হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট বা গর্তের মধ্যে প্রতিক্রিয়া থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। একটি কোশের প্রতীয়মান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল ফ্যাট বা চর্বিযুক্ত ঝিল্লি যা একটি সীমারেখা চিহ্নিত করে, তার মধ্যে জৈব রসায়নিক প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত করে। ইউরোপের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল আবিষ্কার করেন যে হাইড্রোজেন, বাইকার্বোনেট এবং লোহা-সমৃদ্ধ ম্যাগনেটাইটকে সিমুলেটেড প্রাচীন সামুদ্রিক জলে মিশ্রিত করলে জৈব অণুর একটি বিন্যাস হয় যার মধ্যে রয়েছে লং-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি গ্রুপ। এই লং-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডগুলোই সম্ভবত হতে পারে গ্রহের প্রাচীনতম কোশের ঝিল্লি তৈরির জন্য “শক্তিশালী উপাদান”। কিন্তু তাদের নিজস্ব উত্স রহস্যের মধ্যে রয়ে গেছে।
ডারহাম ইউনিভার্সিটির গবেষক গ্রাহাম পুরভিস বলেছেন যে জীবনের সূচনার কেন্দ্রে রয়েছে কোশীয় অংশ যা বাইরের পরিবেশ থেকে অভ্যন্তরীণ রসায়নকে আলাদা করে রাখে। এই কুঠুরিগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং সম্ভাব্যভাবে জীবনের আদি পর্বের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। গবেষকরা পরীক্ষাগারে পৃথিবীর আদিম সাগরের মূল রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলো পুনরায় তৈরি করেছেন, তার সঙ্গে তৈরি করেছেন গরম ক্ষারীয় জল যা অনেকটা হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট থেকে নির্গত জলের অনুরূপ। তারা ম্যাগনেটাইটের উপস্থিতিতে এই হাইড্রোজেন-সমৃদ্ধ তরলকে CO2-সমৃদ্ধ সমুদ্রের জলের সাথে মিশ্রিত করেছিল। ফলস্বরূপ ১৮টি কার্বন পরমাণুবিশিষ্ট যে ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপন্ন হয় তার পৃথক অঞ্চল রয়েছে হাইড্রোফিলিক বা জল-আকর্ষণকারী এবং হাইড্রোফোবিক বা জল-প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য এবং এই অঞ্চলগুলোর জলজ পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে জৈব ‘পকেট’ গঠনের ক্ষমতা রয়েছে। প্রাচীন হাইড্রোথার্মাল ভেন্টের আশেপাশের অবস্থা কোশের ঝিল্লি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করতে যখন সক্ষম হয় তখনই হয়তো পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন দেখা যায়। গবেষণাটি কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত হয়েছিল।