মাথার উপরে নীল আকাশ অথবা সমুদ্রের নীল জলরাশি চারিদিকে নীলের সমারোহ দেখে আমাদের মনে হতেই পারে যে নীল রঙটি প্রকৃতিতে বেশ সাধারণ। কিন্তু পাথর, গাছপালা, গাছের ফুল, বা পশুর দেহের পশম, পাখির পালক, প্রাণীর দেহের চামড়া কিংবা মাছের আঁশ এ সব রঙের মধ্যে নীল রঙটি আশ্চর্যজনকভাবে দুষ্প্রাপ্য। এখন প্রশ্ন হল নীল রং এত বিরল কেন? প্রায় ১০টির মধ্যে ১ টিরও কম গাছে নীল ফুল ফোটে এবং তার থেকেও অনেক কম প্রাণী নীল রঙের হয়।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে তারা নীল রঙ তৈরি করে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া রঞ্জক মিশ্রিত করে, ঠিক যেমন একজন শিল্পী রঙ মিশিয়ে নতুন রঙ তৈরি করেন। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় লাল রঞ্জক, যাকে আমরা অ্যান্থোসায়ানিন বলে থাকি, এবং যার মাত্রা বিভিন্ন অম্লতার মাধ্যমে পরিবর্তন করা যেতে পারে। প্রতিফলিত আলোর সাথে মিলে এই পরিবর্তন নয়নাভিরাম কিছু নীল রঙের শেড দিয়ে বৈচিত্র্য প্রকাশ করে: ডেলফিনাম, প্লাম্বাগো, ব্লুবেল, হাইড্রেনজা, ডেফ্লাওয়ার, মর্নিং গ্লোরি এবং কর্নফ্লাওয়ার। যদিও নীল ফুল বেশ বিরল, নীল পাতাওয়ালা উদ্ভিদ প্রায় নেই বললেই চলে – গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টের পাওয়া কয়েকটি গাছ ছাড়া। এর প্রধান কারণ পদার্থবিদ্যার আলোর সাথে সংযুক্ত। রঞ্জক যে রঙ শোষণ করে তা দিয়ে তার রঙ নির্ধারণ হয় না, বরং যে রঙ প্রতিফলিত করে তাই তার রঙ। সবচেয়ে সাধারণ উদ্ভিদ রঞ্জক হল সবুজ ক্লোরোফিল। গাছের পাতা সবুজ কারণ ক্লোরোফিল সবুজ রঙ শোষণ করে না, বরং সবুজ আলোকে প্রতিফলিত করে। যদিও গাছপালা নীল আলো পছন্দ করে কারণ নীল রঙে দৃশ্যমান বর্ণালীতে থাকা অন্য আলোর চেয়ে বেশি শক্তি রয়েছে। তাই গাছের পাতায় নীল রঙ হলে সে সর্বোচ্চ শক্তির আলো প্রতিফলিত করছে আর শেষে নিজের বৃদ্ধিকে সীমিত করছে তাই বেশিরভাগ গাছপালা এটি এড়িয়ে চলে।
আমাদের বেশিরভাগ মানুষের কিন্তু প্রিয় রঙ নীল – YouGov পোল পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে নীলকে প্রিয় রঙ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে কিন্তু নীল রঙটি বেশ বিরল। অনেক সময় প্রাণীদের রঞ্জক তাদের খাবারের উপর নির্ভর করে। সেই সূত্রে ফ্ল্যামিঙ্গোর গোলাপী রঙ আসে তাদের প্রিয় খাবার চিংড়ি থেকে, আবার গোল্ডফিশের সোনালি রঙও তাদের খাবারের জন্য আসে। কিন্তু যেহেতু উদ্ভিদে কোনো সত্যিকারের নীল রঞ্জক নেই, তাই প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে নীল হতে পারে না। কোনো রঞ্জক পদার্থের মিশ্রণে বা পরিবর্তনের মাধ্যমে নয় কিন্তু অনেক প্রাণীর নীল রঙ তৈরি হয়, আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে। উদাহরণস্বরূপ, নীল মরফো প্রজাপতি। এই প্রজাপতির ডানায় আঁশ রয়েছে যার কারণে কিছু উঁচু নীচু গঠন তৈরি হয় যা আলোকে এমনভাবে বাঁকিয়ে দেয় যে শুধুমাত্র নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রতিফলিত করে। নীল রঙের পাখি, যেমন ব্লু জে, সামান্য ভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নীল রঙ পেয়ে থাকে।এদের প্রতিটি পালকে আলো-বিচ্ছুরণকারী, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা এমনভাবে অবস্থান করছে যাতে নীল ব্যতীত আলোর প্রতিটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাতিল হয়ে যায়। প্রকৃতির একমাত্র ব্যতিক্রম হল ওব্রিনা অলিভিং প্রজাপতি, যা নীল রঞ্জক তৈরি করতে পারে।
কারণ যাই হোক না কেন নীলপ্রকৃতিতে একটা বিরল রঙ হয়েই থাকবে।