অনেকদিন বাদে হঠাৎ একদিন জিমে যাওয়ার পর অথবা অনেকটা দৌড়ানোর পর আমাদের মধ্যে অনেকেরই পেশিতে টান ধরে বা ব্যথা করে। আমরা অনেক সময় ভেবে থাকি যে এই ধরনের ব্যথা পেশিতে ল্যাকটিক অ্যাসিড তৈরির কারণে হয়। কিন্তু গবেষণা দেখায় যে ল্যাকটিক অ্যাসিডের এর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আসল সত্যটি কিন্তু অনেক বেশি আকর্ষণীয়, আবার একটু জটিলও বটে।
আমরা কয়েক দশক ধরে জানি যে ব্যায়ামের পরে পেশি ব্যথার সাথে ল্যাকটিক অ্যাসিডের কোনও সম্পর্ক নেই। গবেষকদের মধ্যে একজন, রবার্ট অ্যান্ড্রু রবার্গস, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়েছিলেন, যে আমাদের কোশগুলো ল্যাকটেট তৈরি করে, ল্যাকটিক অ্যাসিড নয়। আর এই প্রক্রিয়াটি আমাদের পেশি ও রক্তপ্রবাহে অ্যাসিড তৈরি হতে দেয় না। দুর্ভাগ্যবশত, মানুষ এখনও ব্যায়ামের ক্ষেত্রে “ল্যাকটিক অ্যাসিড” শব্দটি ব্যবহার করে। আমাদের ব্যায়াম করার সময় যে পেশিগুলো ব্যবহৃত হয় তার জন্য ল্যাকটেট বড়ো সমস্যার সৃষ্টি করে না। সম্ভবত এর বিভিন্ন ধরনের উপকারিতার কারণে এটি ছাড়া আমাদের আরও সমস্যা হতে পারে। আমাদের শরীরের ওজন বাড়ার পর বা দীর্ঘ বিরতির পরে ব্যায়াম করার কয়েক দিন পরে আমাদের ব্যথা হওয়ার কারণ ল্যাকটেট নয়। সুতরাং, যদি ল্যাকটিক অ্যাসিড বা ল্যাকটেট কোনোটাই না হয় তবে পেশিতে ব্যথার কারণ কী?
আমরা যখন ব্যায়াম করি, তখন আমাদের পেশি কোশে প্রচুর রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এই সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উৎপাদিত বস্তু জমা হওয়ার ফলে কোশে জল প্রবেশ করে। এই জল পেশি কোশের ভিতরে এবং মধ্যে চাপ বৃদ্ধি করে। এই চাপ, পেশি কোশ থেকে অণু চলাচলের সাথে মিলিত হয়ে স্নায়ু প্রান্তকে উদ্দীপিত করে এবং ব্যায়ামের সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে। নতুন ধরনের কোনো ব্যায়াম বা অনেক বেশি পরিমাণে শারীরিক কসরত করার পর মাঝে মাঝে যে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভব করে থাকি তার কারণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। আমরা যদি আমাদের স্বাভাবিক স্তর বা রুটিনের বাইরে ব্যায়াম করি তবে আমাদের পেশি এবং টেন্ডনের সাথে তাদের সংযোগগুলোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষতি হতে পারে। এই ধরনের ক্ষতির ফলে পেশি থেকে আয়ন এবং অন্যান্য অণু নিঃসৃত হয়, যার ফলে স্নায়ু প্রান্তে স্থানীয়ভাবে ফোলাভাব এবং উদ্দীপনা ঘটে। এটিকে বলা হয় “ডিলেড অনসেট মাসেল সোরনেস” বা DOMS অর্থাৎ পেশিতে বিলম্বিত ব্যথার সূত্রপাত। ব্যায়ামের সময় যে ক্ষতি হয় তার প্রতিক্রিয়া পরবর্তী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে দেখা যায় এবং কখনও কখনও ব্যথা এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে অসুবিধা হতে পারে। গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট যে এই পেশির ব্যথার সঙ্গে ল্যাকটেট বা ল্যাকটিক অ্যাসিডের কোন সম্পর্ক নেই। যদিও আমাদের পেশি দ্রুত ক্রিয়াকলাপের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে পরের বার একই ধরনের ক্রিয়াকলাপ করলে অনেক কম ক্ষতি এবং অস্বস্তি হবে। যদি আমাদের ব্যায়ামের কোনো লক্ষ্য থাকে যেমন একটি নির্দিষ্ট হাইক করা বা ম্যারাথনে অংশ নেওয়া তবে নিশ্চিত করতে হবে যে সেটি বাস্তবসম্মত এবং কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করতে হবে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ ধীরে ধীরে পেশি অভিযোজন তৈরি করবে যাতে পেশিতে ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়। সব শেষে বলা যেতে পারে যে আমাদের ব্যায়াম সংক্রান্ত শব্দভান্ডার থেকে “ল্যাকটিক অ্যাসিড” শব্দটি সরিয়ে ফেলতে হবে। পেশি ব্যথায় এর অনুমিত ভূমিকা একটি পৌরাণিক কাহিনী যা অনেক দিন ধরে চলে আসছে।