দক্ষিণ আমেরিকার মধ্য পশ্চিম উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরের মুখোমুখি একটি দেশ পেরু। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া বিশ বছরের তথ্য থেকে জানা যায় যে পেরুর উত্তর থেকে চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত উপকূলীয় মরুভূমির একটি অংশ ধীরে ধীরে সবুজ হয়ে উঠছে। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ হুগো লেপেজের মতে এটি একটি সতর্কতার চিহ্ন। শুষ্ক উপকূলরেখার ২৮০০ কিলোমিটার ব্যাপি মিস্ট ওয়েসিস বা লোমাস দেখা যায় যেখানে কিছু অন্য ধরনের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উদ্ভিদ জন্মায়, যার বেশিরভাগই বিপন্ন। তাদের জলের একমাত্র উৎস সমুদ্র সৃষ্ট কুয়াশা। কুয়াশা ঘনীভবনের ফলে যে জলে পরিণত হয় তা এদের জলের উৎস। এই অঞ্চলে বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ৩ থেকে ১৩ মিমি। কিছু কিছু অঞ্চলে আবার অনেক বছর ধরে বৃষ্টিপাত হয় না আর তাই এখানে গাছপালাও দেখা যায় না।
বন্য প্রজাতির টমেটো, আন্দিয়ান কন্ডোর বা জনপ্রিয় উদ্ভিদ, টিল্যান্ডসিয়ার মতো প্রজাতিগুলো এই মরুভূমিতে দেখতে পাওয়া যায়। এই বাস্তুতন্ত্র জলবায়ু চক্রের সাথে বিকশিত হয় আবার কখনো কখনো ৫ থেকে ১০ বছরের জন্য সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এল নিনোর প্রভাবে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদে ফুল আসে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে, স্যাটেলাইট ডেটা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে উচ্চ আন্দিজ পর্বতমালা এবং বিশাল সমুদ্রের মধ্যে পাদদেশের দীর্ঘ অঞ্চলে ‘লোমাস’ বাড়ছে৷ যদিও এটি স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য আশীর্বাদ, কারণ বেশিরভাগই বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ তবে এর কারণে এলাকার সীমিত সম্পদ বন্টনে পরিবর্তন আসবে। কৃষিজ জমিতে ফসল ফলানোর জন্যও এই অঞ্চল আরও সবুজ হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল ভূমি ব্যবহার সরাসরি লোমাস-এর উপরও প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়েছেন, সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি সবুজায়ন ঘটেছে।
যদিও গবেষকরা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না যে বর্ধিত সবুজায়ন দীর্ঘ আঞ্চলিক জলবায়ু চক্রের অংশ কিনা, কারণ ২০ বছরের স্যাটেলাইটের তথ্যে এখনও এটা ধরা পড়েনি। তবে এই প্রবণতা সাধারণত CO2 ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য বৃষ্টিপাত চক্রের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এত বড়ো পরিবর্তন আমরা রোধ করতে না পারলেও এটির সম্পর্কে জানা থাকলে তা ভবিষ্যতের জন্য ওই এলাকায় ভালো পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে।